খরচের দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় হাইব্রিড জাতের বাহুবলী টমেটো চাষে ঝুঁকছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি উর্বর হওয়ায় উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে টমেটোর চাষ।
সাধারণত বাহুবলী জাতের টমেটো গাছ লাগানোর ২-৩ মাসের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। চার-পাঁচ মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে কম খরচে দ্বিগুণ আয় হয়।
শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর মোল্লাকান্দি গ্রামের কৃষক মো. লুৎফর রহমান হাইব্রিড বাহুবলী টমেটো চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। তাকে দেখে এই গ্রামের অনেক কৃষক এই জাতের টমেটো চাষে আগ্রহী।
লুৎফর রহমান বলেন, একসময় বাপ-দাদার সঙ্গে কৃষিকাজ করতাম। পরে ভাগ্য বদলের আশায় বিদেশে পাড়ি দিই। কিন্তু ভাগ্য বদল হয়নি। সাত বছর বিদেশে থেকে দেশে আসি। দীর্ঘদিন দেশে থেকে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে আবারও কৃষিকাজ শুরুর পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধান ও অন্যান্য সবজির চাষ করে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যাই। কৃষি কর্মকর্তারা উচ্চ ফলনশীল ফসল চাষের পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ করতে বলেন। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে হাইব্রিড বাহুবলী জাতের টমেটো চাষাবাদ করি।
লুৎফর রহমান আরও বলেন, এ বছর দেড় একর জমিতে আগাম জাতের বাহুবলী টমেটো বীজ রোপণ করেছি। জমি চাষ, বীজ রোপণ, সার ও কীটনাশকসহ মোট খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতি মণ টমেটো শীতের শুরুতে পাইকারিতে ২৮০০ টাকা বিক্রি করেছি। তবে এখন দাম কমেছে। বর্তমানে মণ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত টমেটো বিক্রি করে খরচ বাদে দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়েছে আমার। গাছে আরও টমেটো আছে। আরও লাভ হবে।
তিনি বলেন, আগামীতে আরও বেশি জমিতে বাহুবলী টমেটো চাষ করবো। এই টমেটো ক্ষেতে সার, ওষুধ বেশি দিতে হয় না। পোকা দমনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ওষুধ এবং পরামর্শ পেয়েছি।
একই এলাকার কৃষক মো. মিন্টু বলেন, আমার প্রতিবেশী লুৎফর রহমান হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আগামীতে আমিও এই জাতের টমেটো চাষ করবো।
শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার এবার ৪০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। গত বছর টমেটো চাষ হয়েছিল ৩৫ হেক্টর জমিতে। টমেটোর পাশাপাশি স্থানীয় চাষিরা ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও তরমুজসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করেছেন।
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, টমেটো চাষে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেওয়া হয়েছে প্রণোদনাও। টমেটোকে রোগ বালাই থেকে রক্ষার জন্য মাঠপর্যায়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। বাহুবলী জাতের টমোটো চাষে ভালো ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে বাহুবলী টমেটোর আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।