টমেটোর বাম্পার ফলনেও কপালে চিন্তার ভাঁজ চাষির

রাজবাড়ী জেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় শীতকালীন সবজি টমেটোর ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজবাড়ীর জেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার উৎপাদিত টমেটো ব্যাপারীদের মাধ্যমে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে রফতানি করা হচ্ছে।

এদিকে, অসময়ের বৃষ্টিতে টমেটোতে (সিট) কালচে দাগ ও পচন দেখা দিয়েছে। যার ফলে পুনরায় ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন চাষিরা। এতে খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।

জানা গেছে, প্রতি বিঘায় টমেটো চাষে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর লিজের জমি হলে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণেরও বেশি। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ টমেটো হয়। তবে এবার আগাম বৃষ্টিতে টমেটোর গায়ে ছোট কালচে দাগের পাশাপাশি পচন দেখা দিয়েছে। যার কারণে এখন দামও কম পাচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে টমেটো ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন গোয়ালন্দ উপজেলার চরকর্ণেশনা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে টমেটোর ক্ষেত। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা টমেটো। অনেক ক্ষেত থেকে কৃষকরা টমেটো তুলে ঝুড়িতে রাখছেন। নারী-পুরুষ সবাই টমেটো তোলার কাজ ব্যস্ত সময় পার করছেন। টমেটো তোলা শেষে ঝুড়ি মাথায় নিয়ে মাঠ থেকে দূরে নিয়ে বস্তায় ভরছেন। পরে সেখান থেকে ভ্যান, ট্রাকে করে জেলাসহ বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে এই টমেটো।

চাষি মোকসেদ শেখ, শুকুর আলি, হায়দার আলী শেখ ও কেসমত সরদার বলেন, ‘চরবাসীর জন্য টমেটো চাষ অনেকটা লাভজনক ফসল। আমরা প্রতিবছর একেকজন ৪-৫ বিঘা করে টমেটোর আবাদ করি। বৃষ্টির কারণে এবার টমেটোতে কালচে দাগ পড়েছে। যার ফলে অনেক টমেটোতে পচন ধরছে। তাছাড়া এখন বাজারেও  টমেটোর দাম কম। প্রথম দিকে টমেটোর দাম ভালোই পেয়েছিলাম, এখন বাজার পড়ে গেছে। ফলে যে লাভের আশা করেছিলেন, তা আর হবে না।’

উজানচর ইউনিয়নের মজলিশপুর চরের কয়েকজন চাষি বলেন, ‘এবার টমেটোতে ভালোই ফলন হয়েছে। আমাদের এখানে নিজের জমি হলে প্রতি বিঘাতে ৩০ হাজার টাকার মতো সবমিলিয়ে খরচ হয়। আর জমি লিজ নিয়ে করলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি টমেটো ১০-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দাম এতো কম হলে আমাদের এবার লাভ হবে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ী জেলাতে ৭২২ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু এর মধ্যে বেশি আবাদ হয়েছে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে। এ বছর রাজবাড়ী সদরে সদর ২৪৬, পাংশায় ৭৫, গোয়ালন্দে ৩৫৭, বালিয়াকান্দিতে ১০ ও কালুখালীতে ৩৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার রাজবাড়ী জেলায় টমেটোর আবাদ ভালো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফলনের কিছুটা ক্ষতি হলেও পরে কীটনাশক প্রয়োগে ভালো কাজে দিয়েছে। ফলে এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।’