ইন্স্যুরেন্সের টাকা পেতে পোড়ানো হয়েছে বরকত-রুবেলের ১২টি বাস

ইন্স্যুরেন্সের টাকা এবং ব্যাংকের ঋণ মুক্তি পেতে দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা বরকত ও রুবেলের মালিকানাধীন ১২টি বাস পোড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সোমবার (২১ মার্চ) বিকাল ৪টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জামাল পাশা।

সংবাদ সম্মেলনে জামাল পাশা বলেন, বাস পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার হেলিপোর্ট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। একই দিন বিকালে গ্রেফতার তিন জনের দুজন ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলামের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) ইমদাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. হেলালউদ্দিন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার প্রমুখ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন ফরিদপুর শহরের পশ্চিম গোয়ালচামট মহল্লার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম জনি (২৪) ও পারভেজ মৃধা (২১) এবং নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের শেখ মোহাম্মদ আলী (৪১)।

আরও পড়ুন: আগুনে পুড়লো অর্থপাচারের মামলায় গ্রেফতার দুই ভাইয়ের ১২ বাস

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত জহুরুল ইসলাম ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লা এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ওজোপাডিকো গোয়ালচামট শাখার সামনে রঘুনন্দনপুর এলাকায় রাখা বরকত ও রুবেলের মালিকানাধীন ২২টি বাস দেখাশোনা করতেন। মোহাম্মদ আলী বাসগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়া পারভেজ খানকে এই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জহুরুল হক ও শেখ মোহাম্মদ আলী বাসে আগুন দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্তে ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ইন্স্যুরেন্সের টাকা পেতে এবং ব্যাংকের ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জব্দ করা ১২টি বাস পোড়ানো হয়েছে।

গত ১২ মার্চ সকালে বাসগুলো পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। ওই দিনই ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফফার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় নাশকতার অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করেন।

ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন

মামলাটি তদন্ত করছেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন। এসআই ফরহাদ হোসেন বলেন, এই মামলায় গ্রেফতার জহুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীকে সোমবার বিকালে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। বাস পোড়ানোর কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারা। তাদের জবানবন্দিতে অপর আসামি পারভেজের নাম এসেছে। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আগুনে পোড়ানো বাসগুলো দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের।

আরও পড়ুন: বরকত-রুবেলের বাস পোড়ানোর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন

২০২০ সালের ২৬ জুন বরকত ও রুবেলের নামে ঢাকার কাফরুল থানায় দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করে ঢাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২১ সালের ৩ মার্চ সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা উত্তম বিশ্বাস বরকত ও রুবেলসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর, মোশাররফের এপিএস জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক এ এইচ এম ফোয়াদ। তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

চার্জশিট দেওয়ার পর মামলার আলামত হিসেবে সাউথ লাইন পরিবহনের ওই বাসগুলো জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। বাসগুলো মামলার আলামত হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জেলা পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই মধ্যে বাসগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।