হাসপাতালের রোগীদের ‘পথের কাঁটা’ ওজন মাপার মেশিন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের সামনে স্থাপিত ডিজিটাল ওজন পরিমাপক যন্ত্রটি (ওয়েট স্কেল) সাধারণ মানুষ ও রোগীদের ‌‘পথের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে ওজন দিতে আসা পণ্যবাহী শত শত যানবাহনের চাপে প্রতিদিন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে।

জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট পারে ফেরিতে ওঠা পণ্যবাহী ট্রাক পরিমাপের জন্য কয়েক বছর আগে ওজন মাপার মেশিন স্থাপন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ। প্রায় প্রতিদিনই এই মেশিনের কারণে যানবাহনের লম্বা সারি তৈরি হয়। স্কেলের জন্য দিন-রাত মহাসড়কে গাড়ির জট লেগে থাকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র প্রবেশে পথও বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে হাসপাতালের প্রবেশপথ যানজটে বন্ধ থাকায় অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। এছাড়া রাস্তায় সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটে।

বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ওয়েট স্কেল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পেছনে জমিদার সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের দুই লাইনে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। রাস্তার এক পাশ দখল করে আছে পণ্যবাহী ট্রাক। এ কারণে সেখান দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকছে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য যানবাহন।

দৌলতদিয়া ঘাট পারে ফেরিতে ওঠা পণ্যবাহী ট্রাক পরিমাপের জন্য বসানো হয় ওজন মাপার মেশিন

উপজেলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা হাসান মাহমুদ বলেন, ওয়েট স্কেলের কারণে প্রতিদিনই উপজেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে যানজট লেগে থাকে। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। এর আগে এই যানজটের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন এক ব্যক্তি। গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সময় মতো নিতে না পারায় হাসপাতালের প্রবেশপথেই তার মৃত্যু হয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাজমা আক্তার বলেন, উপজেলা মাঠে স্থাপিত ওয়েট স্কেলের কারণে ট্রাকের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এতে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বের হতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

যশোর থেকে আসা ঈগল পরিবহনের যাত্রী শারমিন আক্তার বলেন, গোয়ালন্দ রেলগেট নামক স্থানে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট বাস আটকে আছে। কয়েকজনের কাছে শুনলাম সামনে ওয়েট স্কেলের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। 

ওজন পরিমাপের মেশিনের কারণে সড়কে দিন-রাত গাড়ির জট লেগে থাকে

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল হক বলেন, যানজটে হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ থাকায় রোগী আনা-নেওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্বজনদের। এমনকি গাড়ির অতিমাত্রায় হাইড্রোলিক হর্নে রোগী, কর্মী ও আবাসিক বাসিন্দারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। উপজেলা প্রশাসনের কাছেওয়েট স্কেলটি স্থানান্তরের অনুরোধ জানাচ্ছি।

গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সী বলেন, আমি প্রতিমাসে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় ওয়েট স্কেল সরানোর ব্যাপারে কথা বলি। এছাড়া এ ব্যাপারে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত উপজেলা সংলগ্ন থেকে মেশিনটি অন্যত্র সরিয়ে নেবেন তারা।

বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন বলেন, গোয়ালন্দ মোড় থেকে পুলিশ একযোগে ট্রাক ছেড়ে দিলে ওয়েট স্কেল এলাকায় সাময়িক যানজট তৈরি হয়। স্কেলটি অন্যত্র স্থাপনের দাবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।