ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হতে চাই: দেশসেরা ইভা

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা হয়েছেন মুন্সীগঞ্জের নাসরিন সুলতানা ইভা। গত ২৪ এপ্রিল ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন তিনি। এর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অর্জন করেন ইভা। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে ইভা জানান, একজন ভালো চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হতে চান তিনি। এই মহান পেশায় যুক্ত থেকে মানুষের সেবা করার সংকল্পের কথা জানান ইভা।

ইভার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের সিপাহীপাড়া শাঁখারীবাজার এলাকায়। তার পরিবারে চার সদস্য। বাবা-মা আর বড় বোন। ইভা বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। তার বাবা ইউনুস আলী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইন ন্সট্রাক্টর। মা আরজিনা বেগম গৃহিণী। ইভা এ বছর মুন্সীগঞ্জের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

ইভার প্রাথমিক জীবন শুরু হয় মিরকাদিম পৌরসভার গোয়ালঘুর্ন্নী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এক বছর পড়ার পর ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংলিশ মিডিয়ামে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে ওই স্কুল থেকে ২০১৩ সালে পিএসসি, ২০১৭ সালে জেএসসি, ২০১৯ সালে এসএসসি এবং ২০২১ সালে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় ইভা জিপিএ-৫ পেয়েছেন।’

মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে ইভাআল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইভা বলেন, ‘আমি খুবই খুশি বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এইচএসসি পরীক্ষার আগে থেকেই মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য আলাদাভাবে কোনও প্রস্তুতি নিতে হয়নি। এই সফলতার পেছনে আমার চেয়ে আমার বাবা-মা ও বড় বোনের পরিশ্রমটাই বেশি ছিল। আমাকে বেশি সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করেছেন আমার স্কুলের শিক্ষকরা। আমার পথ চলাটা আরও সহজ করে দিয়েছেন তারা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ইভা বলেন, ‘আমার ইচ্ছা মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে এমবিবিএস কোর্সটা সম্পন্ন করা এবং একজন ভালো ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ হওয়া। আমি চাই একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে। যারা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চাই। শুধু মানুষের সেবার জন্য কাজ করে, এমন মানবিক ডাক্তার হতে চাই। এই মহান পেশাকে আমি মানবসেবা করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।’

ইভার বাবা ইউনুস আলী বলেন, ‘মেয়ের এমন সাফল্য দেখে আমি বাবা হিসেবে খুবই গর্বিত। আমার মেয়ে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৫০তম স্থান লাভ করেছে। গত ২৪ এপ্রিল ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তবে ইভার স্বপ্ন ডেন্টাল নয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়া।’

ইভার বড় বোন আইরিন সুলতানা বলেন, ‘ছোট বোনের এমন অর্জন খুবই আনন্দের! ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় ইভা প্রথম স্থান অর্জন করায় আমরা সবাই অনেক খুশি হয়েছি। তবে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছি ইভা মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় পঞ্চাশতম স্থান অর্জন করায়। সেটি ছিল আমাদের জন্য কাঙ্ক্ষিত। ছোটবেলা থেকেই আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। ইভা পড়াশোনায় একটু বেশি মনোযোগী ছিল।’

মুন্সীগঞ্জের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক সাইফুর রহমান টিটু বলেন, ‘করোনার সময় আমরা অনলাইনে ক্লাস করি এবং সেটি নিয়মিত চালু ছিল। সব শিক্ষকের প্রচেষ্টা আর ইভার ইচ্ছাশক্তির সম্মিলনে এই ফল সম্ভব হয়েছে।’