পদ্মায় বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছে কারা?

পদ্মা নদীর মাঝখানে আড়াআড়িভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবাধে মাছ শিকার চলছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সী বাজার ও সদর উপজেলার চর বরাট এলাকায় এভাবে দীর্ঘদিন ধরে মাছ শিকার করছে একটি চক্র। অভিযান চালিয়ে অপসারণের পর আবারও বেড়া দেওয়া হয়েছে। এতে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

সোমবার (১৩ জুন) সরেজমিন দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের অন্তার মোড় এবং সদর উপজেলার চর বরাট এলাকায় পদ্মা নদীজুড়ে বিশাল আকারের বেড়া দেওয়া রয়েছে। সহস্রাধিক বাঁশের সঙ্গে কাঁথা ও ঘন সুতি জাল পাতা হয়েছে। বেড়ার বিভিন্ন স্থানে জাল দিয়ে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরি করেছে তারা। চলার পথে বেড়ায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জালের ওই ফাঁদে আটকা পড়ে মাছ। শুধু বড় আকারের মাছ নয়, ছোট পোনা মাছও আটকা পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণীও আটকা পড়ছে।

অন্তর মোড়ের চরা বরাট এলাকায় স্থাপিত বেড়ার কাছে পাহারায় নিয়োজিত এক শ্রমিককে জাল পরিষ্কার করতে দেখা যায়। পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে উত্তর না দিয়ে জাল পরিষ্কার করতে থাকেন তিনি। কেমন মাছ আটকা পড়ছে জানতে চাইলে বলেন, ‘মাছ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকদিন তো মাছই পাইনি। দুই-চার দিন ধরে আবার পাওয়া যাচ্ছে।’

কারা বেড়া দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন, সঙ্গে পাবনার জেলেরা রয়েছে। ভোরে জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে নেওয়া হয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় বারেক মোল্লা, ছালাম, রাজবাড়ী সদর বরাটের দুলাল কাজী এবং পাবনার নৈদা হালদার ও নগরবাড়ি এলাকার দুখু হালদারসহ কয়েকজন বাঁশের বেড়া দিয়েছেন। দুটি বেড়ায় দেড় হাজারের বেশি বাঁশের খুঁটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লক্ষাধিক টাকার জাল কেনা হয়েছে। আড়াআড়ি করে বেড়া দেওয়ায় নৌকা চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।

চর বরাট এলাকার শাহজাহান শেখ বলেন, ‘নদীর এক পাড় থেকে আরেক পাড় পর্যন্ত আড়াআড়িভাবে বেড়া দেওয়া হয়েছে। একে তো বেড়া দিয়ে সব ধরনের মাছ শিকার করা অন্যায়, তার ওপর নৌকা চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আরও বড় অন্যায় করা হচ্ছে। বিষয়টি দেখার কেউ নেই।’

মুন্সী বাজার এলাকার বারেক মণ্ডল বলেন, ‘দিন দিন নদীর মাছ কমে যাচ্ছে। তার ওপর বেড়ার সঙ্গে ঘন সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় পোনা-ডিম পর্যন্ত আটকা পড়ছে। এতে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি ডেকে আনছি।’

গোয়ালন্দ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. টিপু সুলতান বলেন, ‘নদীতে আড়াআড়িভাবে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা, সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিছুদিন আগে নদীতে দুটি বেড়া থাকার খবর পেয়ে আমরা এবং সদর উপজেলা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে অপসারণ করি। নতুন করে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’