মাওয়া প্রান্তে প্রস্তুতি শেষের দিকে 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে দৃশ্যমান। দেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত এই সেতু শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতিও শেষের দিকে। এদিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি কূটনীতিকসহ দেশ বরেণ্য সুধীজনরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সমাবেশের দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা।  

ঢাকার বাসাবো থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা রায়হান সরদার ইফাজ বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে। এই সময়ের সাক্ষী হতে আর কয়েকটি দিনের অপেক্ষা মাত্র। তাই শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিজের চোখে দেখতে এসেছি মাওয়া প্রান্তে। উদ্বোধনী দিনে এখানে এসে সরাসরি দেখার সুযোগ পাবো না। তাই আগেভাগেই এসেছি দেখতে। তবে সেদিন আমরা টেলিভিশনে সরাসরি দেখবো। অনুষ্ঠান যেন সুন্দর হয় এই কামনাই করি।

লৌহজং যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মরতুজা আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে লৌহজং উপজেলার সবার মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এপারে একটি সুধী সমাবেশ করবেন। তাই উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে বরণ করতে লৌহজং উপজেলাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সেতুর কারণে আমাদের এলাকার জায়গার দাম অনেক বেড়েছে। এছাড়া এলাকাটি পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থায় পরিবর্তন আনবে।

এদিকে উদ্বোধনী নামফলক ও ম্যুরাল স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে পুরোদমে।  

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যবস্থাপক দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বলেন, সেতুর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আজ চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু বিভাগকে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে, এরপরও এক বছর তারা "ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড" এর কাজ করবে।

সেতুর সহকারী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ মজুমদার বলেন, হ্যান্ডওভারের পর এখন আমরা টুকটাক কাজ যেগুলো বাকি আছে তা দেখে নিচ্ছি।  

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সংসদ সদস্যরা।

মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক জাতীয় সংসদের হুইপ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। এই এগিয়ে যাওয়ার পথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এক বিশাল মাইলফলক। যতদিন দেশ থাকবে ততদিন বাঙালি মনে রাখবে, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং মানুষের সুবিধার জন্য নিজেদের অর্থে বঙ্গবন্ধু কন্যা এই সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতু শুধু সেতু নয়, এটা আমাদের আত্মমর্যাদার পরিচয়।  

২৫ তারিখ উপলক্ষে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর সঙ্গে আমাদের সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনও কাজ করছে।  

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বলেন, আমি মুন্সীগঞ্জ জেলাবাসী ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের পক্ষ থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তার ঐকান্তিক অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রতিফলন হচ্ছে পদ্মা সেতু। তাকে আন্তরিক অভিবাদন জানাচ্ছি। 

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, উদ্বোধনকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হবে। বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট ও ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। 

আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দুয়ার উন্মোচন হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতুর। ২৬ জুন সকাল থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।