‘কাল থেকে রোগী নিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে যাবো’

দ্বার খুলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। রবিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে সেতু দিয়ে পারাপার হবে যানবাহন। এতদিন দুর্ভোগ সয়ে ফেরিতে পদ্মা পার হওয়া যানবাহন চালকদের মুখে হাসির ঝিলিক। অবসান ঘটছে দীর্ঘ দুর্ভোগের। আগামীকাল থেকেই সেতু দিয়ে যানবাহন নিয়ে পারাপার হবেন তারা। শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যানবাহন চালকদের মুখেও ফুটে উঠেছে সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস।

ফরিদপুর থেকে রোগী নিয়ে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালগামী অ্যাম্বুলেন্সের চালক রাকিব বলেন, ‘আজকের পর থেকে আর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যাবো না। ঘাটে এলেই রোগী নিয়ে ফেরির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। আগামীকাল (রবিবার) থেকে রোগী নিয়ে সেতু দিয়েই পার হবো। সময়ও বাঁচবে, খরচও কম হবে।’

সরেজমিন দেখা গেছে, বেনাপোল থেকে লোহার কুচি নিয়ে শুক্রবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন ট্রাকচালক নুরুজ্জামান। দুপুরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে পৌঁছালে পুলিশ তাকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে আটকে ট্রাকের সিরিয়ালে পাঠিয়ে দেয়। পরে দৌলতদিয়া ঘাটে এলে রাত ১১টার দিকে আবারও ট্রাকের সিরিয়ালে আটকে পড়েন তিনি। শনিবার দুপুর ১টার দিকে দৌলতদিয়া হাইস্কুলের সামনে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

পদ্মা পার হতে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা অ্যাম্বুলেন্স

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। নদী পাড়ি দিতে আমাদের আর কোনও কষ্ট হবে না। থাকতে হবে না সিরিয়ালে। তখন ঘাটে পরিবহন ও ছোট গাড়ির চাপ কম থাকবে। ঘাটে এসে সরাসরি ফেরিতে পার হতে পারবো।’

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রাক নিয়ে পারাপার হবেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে ওভারলোড ট্রাক পারাপার বন্ধ। সে জন্য আমরা দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করবো। সাধারণত বড় ট্রাকে ঢাকার আশপাশের মালামাল বহন করি। বেনাপোল, যশোরসহ দক্ষিণবঙ্গের মালামাল নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে নদী পার হলে খরচ কম হবে। যারা দূরে মাল বহন করবেন এবং ট্রাকে ওভারলোড থাকবে না, তারা পদ্মা সেতু ব্যবহার করলে ভালো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোন পাশ দিয়ে যাবো, গাড়ির মালামালের ওপর সেটা নির্ভর করবে। যে পাশ দিয়ে মালামাল বহনে সুবিধা হবে, সেই পাশই ব্যবহার করবো।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোতের কারণে ফেরি স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে মাঝে মধ্যে দুয়েকটি ফেরি বিকল হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে ফেরির ট্রিপের সংখ্যাও কমে গেছে। এতে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রাকের দীর্ঘ সারি

আটকে থাকা যাত্রীবাহী পরিবহনের পাশাপাশি পচনশীল পণ্যের গাড়িগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হচ্ছে। এরপরও ঘাটে ফেরির নাগাল পেতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগছে। অপরদিকে, সাধারণ পণ্যের গাড়ি আটকে থাকছে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘাট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ওয়াজে চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার গাড়ির লম্বা সারি তৈরি হয়েছে। সেখানে প্রায় ৬০০ ঢাকামুখী পণ্যবাহী গাড়ি ফেরিতে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে। এরমধ্যে এক কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাসের সিরিয়াল রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২০টি ফেরি চলছে। তীব্র স্রোতের কারণে প্রতিটি ফেরির আসা ও যাওয়ায় এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে শিমুলিয়া ঘাট বন্ধ থাকায় যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে। অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাক দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে নদী পার হবে। সেজন্য কয়েকশ ট্রাক আটকে আছে। আশা করছি সন্ধ্যার মধ্যে এই চাপ কমে আসবে।’