পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুর-ঢাকা বাস চলাচল শুরু, বেশি ভাড়া আদায়

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ফরিদপুর-ঢাকা বাস চলাচলের দাবি ছিল যাত্রীদের। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকাল থেকে শুরু হলো ফরিদপুর-ঢাকা বাস সার্ভিস। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে প্রতি ঘণ্টায় জেলা শহর থেকে বাস ছেড়ে যাবে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত। তবে প্রথম দিনেই যাত্রীদের কাছ থেকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতুর টোল সংযোজন করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ রুটের বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে ঢাকা-ভাঙ্গা-ফরিদপুরের ভাড়া ২৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ফরিদপুর থেকে ঢাকার ভাড়া ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, আগে ঢাকায় যেতে সময় লাগতো চার-পাঁচ ঘণ্টা এখন লাগছে দুই ঘণ্টা। ফরিদপুর বাস টার্মিনাল থেকে গোল্ডেন লাইন ও বিআরটিসির বাস সকাল ৬টা থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। 

যাত্রীরা জানিয়েছেন, শুরুর দিন যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। আগে বাসযোগে ফেরি পার হয়ে যেতেও ৩৫০ টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু দিয়ে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করেনি বাস মালিক সমিতি।

প্রথম দিনেই যাত্রীদের কাছ থেকে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া হয়েছে

তবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত ফরিদপুর-ঢাকার ভাড়া ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে ফেরি পার হয়ে যেতে এ ভাড়া নির্ধারণ করেছিল বাস মালিক সমিতি। যেহেতু এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যে মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া পুনরায় নির্ধারণ করা হবে।

এদিকে, আগের রুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে ঢাকায় যাতায়াতের পরিবহনও চালু রয়েছে। এই পথে চাপ কমে যাওয়ায় ভোগান্তি কমেছে লঞ্চে ও ফেরিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশির দশকের শুরুর দিকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় বাস চলাচল চালু করে পরিবহন কোম্পানিগুলো। তার আগে ঢাকার যাত্রীদের ভরসা ছিল আরিচামুখী লোকাল বাস কিংবা ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট (বর্তমান নদী বন্দর) থেকে লঞ্চ চলাচল। ১৯৯০ সালের দিকে ফরিদপুর থেকে ঢাকার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাসই একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে।

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী আশরাফ হোসেন বলেন, ‘বাস ভাড়া আগের মতোই নেওয়া হচ্ছে। তবে অল্প সময়ে ঢাকায় যেতে পারছি। সকালে রওনা দিয়েছি, কাজ শেষ করে আবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরে ফিরবো। পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।’

বিআরটিসি বাসের যাত্রী সালাম শেখ বলেন, ‘আগে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে যাতায়াত করতাম। ঢাকায় যেতে সময় লাগতো চার-পাঁচ ঘণ্টা। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে দুই ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো। ঘাটের যানজট আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’

ঢাকাগামী কলেজশিক্ষার্থী রাসেল শেখ বলেন, ‘আমি শিক্ষাবোর্ড থেকে সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছি। সকালে রওনা দিলাম, কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় ফিরবো। এর আগে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যেতে-আসতে দুই দিন লাগতো। যেদিন যেতাম ওই দিন কাজ করতে পারতাম না, পরদিন কাজ শেষ করে বাড়িতে আসতে হতো। এখন আর সেই ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’

ফরিদপুর বাস টার্মিনাল থেকে বিআরটিসির বাস ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের চালক আবুল হোসেন বলেন, ‘আগে ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজট থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এখন সে সমস্যা নেই। আগে একটি ট্রিপ দিতে পারতাম, এখন একাধিক ট্রিপ দিতে পারবো। এতে আমাদের আয় বাড়বে। ফেরি ও যানজটের কারণে যাত্রীদের অনেক বাজে কথা শুনতে হতো। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল শুরু হওয়ায় আমরা খুশি।’

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ফরিদপুর কাউন্টারের ব্যবস্থাপক অরুন সাহা বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে বাস চালু করা হয়েছে। সকাল ৬টায় প্রথম গাড়িটি ছেড়ে গেছে। যাত্রীদের ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। সব আসনে যাত্রী ছিলেন। যাত্রীরা অনেক খুশি, আমরাও নতুন রুটে বাস চালু করতে পেরে খুশি হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‌‘ফেরিঘাটের ভোগান্তি আর পোহাতে হবে না। পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যাবে। এছাড়া দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে বাস সার্ভিস আগের মতই থাকবে।’

বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ কেবল যাত্রা শুরু হলো। কয়েকদিনের মধ্যে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে।’

জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে বিআরটিএ কত টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা আমার জানা নেই। এ জন্য আগের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আজ শুধু গোল্ডেন লাইন ও বিআরটিসির বাস সার্ভিস শুরু হয়েছে। আরও কয়েক কোম্পানির বাস নামলে সবাই মিলে বসে পুনরায় ভাড়া নির্ধারণ করবো।’