শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা: সেই ছাত্রের নানা স্কুলের সভাপতি চাচা পরিচালক

সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত দশম শ্রেণির ওই ছাত্র স্কুল কমিটির সভাপতি হযরত আলী মিয়ার নাতি। তার বাবার মামাতো ভাই মারুফ আলী সুমন স্কুলের পরিচালক। নানা সভাপতি ও চাচা পরিচালক হওয়ায় স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে প্রভাব দেখাতো সে। চলাফেরাও ছিল বখাটে স্বভাবের। এলাকায় নিজের একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপও রয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ জুন) স্কুলের একাধিক শিক্ষক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সে বখাটে স্বভাবের ছেলে ছিল। স্কুলের নিয়ম কানুন সে ঠিকমতো মানতো না। আর শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন উৎপল কুমার সরকার। এসব বিষয় নিয়ে সে একাধিকবার বুঝিয়েছেন। না পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও দেন তিনি। সে কারণেই ওই শিক্ষার্থীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।’

তিনি বলেন, ‘মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলার সময় হঠাৎ মাঠ থেকে স্ট্যাম্প নিয়ে ওই শিক্ষককে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ সময় তাকে আটক করা হলেও তার বাবা এসে প্রভাব দেখিয়ে ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে যান। ওই ছাত্রের নানা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও চাচা পরিচালক হওয়ার কারণে এই প্রভাব দেখায়।’

স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীরা বলে, ‘নানা সভাপতি ও চাচা পরিচালক হওয়ায় স্কুলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রভাব দেখাতো। সহপাঠীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই খারাপ আচরণও করতো। এ ছাড়াও স্কুলের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতো। উৎপল স্যার একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা তার চাচাকে জানিয়ে দেন। সে কারণে সে ওই স্যারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এই ঘটনা ঘটায়।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলের মতো এলাকায়ও সেই ছাত্র বেপরোয়া চলাফেরা করতো। এলাকার মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতো। তার নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাংও ছিল।

এদিকে, এই ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওই ছাত্রকে গ্রেফতার ও তার পরিবারের সদস্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। দ্রুত তাকে গ্রেফতার না করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।

আশুলিয়া থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষক হত্যার ঘটনার পর থেকেই ওই ছাত্র আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য আশুলিয়া থানা পুলিশের কয়েকটি দল অভিযান চালাচ্ছে। দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

শনিবার (২৫ জুন) হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল কুমার মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ এক ছাত্র মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত শিক্ষককে দ্রুত উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে এনাম মেডিক্যালে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়েছে। হত্যাকারীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।