স্কুলে রঙ মাখামাখি করায় ২ ছাত্রীকে মারধর করা সেই শিক্ষক বরখাস্ত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ঈদুল আজহার ছুটি পেয়ে বিদ্যালয়ে আনন্দ-উল্লাস করায় সপ্তম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগে শিক্ষক জসিম উদ্দিন ভূঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার (৩ জুলাই) হাজী নূর উদ্দিন আহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহর লাল ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে রূপগঞ্জের বরপা এলাকার ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মারধরের বিষয়টি আমলে নিয়ে স্কুল কমিটির সবাই মিটিং করে শিক্ষক জসিম উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই দিন ছাত্রীরা রঙ দিয়ে খেলছিল, একজন আরেকজনের গালে দিচ্ছিল। এসব দেখে সিনিয়র শিক্ষক জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া তাদের শাসন করে। এ সময় তিনি বেত দিয়ে তাদের আঘাত করেন। এতে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তিনি কোথায় বেত পেয়েছেন তা জানা নেই।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে যাবো।’

ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তার মানে হলো সত্যতা পেয়েছে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ (স্কুল ম্যানেজিং কমিটি) তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রশাসনিকভাবে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা বিষয়টা দেখছি।’

এ ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থীর মা রূপগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, তার মেয়ে হাজী নুর উদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৩ জুলাই হতে ছুটি ঘোষণা করা হলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা শনিবার দুপুর ১২টায় স্কুল ছুটি হলে আনন্দ-উল্লাস করছিল। এ সময় তারা রঙ মাখামাখি করে। এতে স্কুলের শিক্ষক মো. জসিম তার মেয়ে ও এক বান্ধবীকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নিয়ে বেত দিয়ে পিটুনি দেয়। এতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাড় ভাঙা জখম হয়। বাদীর মেয়ে অজ্ঞান হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় স্কুলের বারান্দায় পড়ে ছিল। পরে খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে ইউএস বাংলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি।

আহত আরেক ছাত্রীর মামা দাবি করেন, শিক্ষক জসিম তাদের মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। তারা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিল। বেত দিয়ে পিটিয়েছে, চড়-থাপ্পড় দিয়েছে এবং চুল ধরে টান দিয়েছে। এ ঘটনায় তারা পা ধরে মাফ চাইতে গেলে লাথি মারে। স্কুলের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় আইসিইউতে নেওয়া হয়। আইসিইউতে থাকার পরে এখন বেডে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, ‘শনিবার দুপুরে তাদের হাসপাতালে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তারা বমি করা শুরু করে। অবস্থা খারাপ হলে বিকালে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আজ সকালে অবস্থার উন্নতি হলে বেডে দেওয়া হয়।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’