২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় বেঁচে ফেরা মাহবুবা

এখনও আঁতকে উঠি, কান্নায় চোখ ভিজে যায়

ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলের নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ দলের কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হন।

সেদিন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান নিহত হয়েছিলেন। সমাবেশের মঞ্চের সামনেই রাস্তায় কর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন তিনি। হামলার পর আইভি রহমানের পাশে যে তিন নারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন তাদের একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন। বেঁচে ফিরলেও এখনও তার শরীরে রয়েছে ১৮০০ স্প্লিন্টার। এগুলো সারাক্ষণ তাকে যন্ত্রণা দেয়। ১৮ বছর ধরে স্প্লিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তিনি। তবে হামলার পর কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা তার খোঁজ-খবর নিলেও গত আট বছর ধরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার খবর রাখে না বলে অভিযোগ করেছেন মাহবুবা।

তিনি বলেন, ‘সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য মুরাদ জং আগে খোঁজ-খবর নিলেও গত আট বছর ধরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমার খোঁজ নেয়নি। দলের জন্য প্রতিনিয়ত এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। অথচ দলীয় কোনও অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। প্রধানমন্ত্রী আমার সন্তানদের খোঁজ রাখছেন বলে এখনও বেঁচে আছি।’

গ্রেনেড হামলায় সেদিনের ভয়াবহতার কথা জানিয়ে মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘সেদিন আইভি রহমানের পাশেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলাম আমরা তিন জন। বেঁচে আছে নাকি নিহত হয়েছি কেউ বুঝতে পারেনি। আমাকে মৃত মনে করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মর্গের লাশ ঘরে ফেলে রাখা হয়। টানা ছয় ঘণ্টা লাশ ঘরে পড়ে থাকার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে আমাকে জীবিত দেখতে পান। ৭২ ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফিরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভারত পাঠান। সেখানে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলেও শরীরে থাকা এক হাজার ৮০০ স্প্লিন্টার বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। এখনও স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট এলেই সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ে। এখনও আঁতকে উঠি। সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায়। কান্নায় চোখ ভিজে যায়। ওই দৃশ্য মনে করলে ভয়ে শরীর অবশ হয়ে যায়।’

মাহবুবা আরও বলেন, ‘এক হাজার ৮০০ স্প্লিন্টারের মধ্যে মাত্র তিনটি স্প্লিন্টার বের করা গেছে। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। ১৮ বছর ধরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরের মধ্যে নিয়ে মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সারাক্ষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে স্প্লিন্টার। আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম। আমি হামলাকারীদের ফাঁসি চাই।’

মাহবুবা পারভীনকে কেন দলীয় অনুষ্ঠান ও সভায় ডাকা হয় না জানতে চাইলে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, ‘মাহবুবা পারভীনের শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। সেজন্যই মূলত তাকে অনুষ্ঠান ও সভায় ডাকা হয় না। তবে বিশেষ কোনও দলীয় অনুষ্ঠান থাকলে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।’