সংঘর্ষে নিহত যুবক রাজনীতি করতেন না, দাবি পরিবারের

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে নিহত শাওন প্রধান (২৩) কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছে পরিবার। তবে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন, তিনি যুবদলের কর্মী ছিলেন। 

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে শাওনের অংশগ্রহণের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিএনপির একটি মিছিলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাঁটছেন তিনি।

শাওন প্রধান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নে পূর্ব গোপালনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে।  তিনি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। শাওনের চাচা শওকত আলী বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন নিহত

শওকত আলী বলেন, ‘শাওন আমার চাচাতো ভাই সাহেব আলীর ছোট ছেলে। সে কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। সে যদি রাজনীতি করতো তাহলে নিশ্চই বিষয়টি আমার জানা থাকতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। কার গুলিতে মারা গেছে তা এখনও আমরা নিশ্চিত নই। তাছাড়া সে মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সড়কে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে, নাকি সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে হয়েছে তা এখনও জানতে পারিনি।’

শাওনের বড় ভাই ফরহাদ প্রধান বলেন, ‘আমার ভাই কোনও রাজনীতি করতো না। সে কীভাবে সেখানে গেছে আমাদের জানা নেই।’

এদিকে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘শাওন বিএনপির একাধিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। সেই প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এখন কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে হবে না। কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, যুবদল নেতা সাদেক ভাইয়ের সঙ্গে সে রাজনীতি করতো। শাওন সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিল।’

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘শাওন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেকের সঙ্গে রাজনীতি করতো। সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার সে বিএনপির প্রোগ্রামে ছিল, তার ছবিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই দেখেছে।’

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি বলেন, ‘শাওন দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং যুবদলের সক্রিয় কর্মী। সে আমাকে চাচা বলে ডাকতো। যুবদল নেতা সাদেকুর রহমান সাদেকের সঙ্গে সে রাজনীতি করতো। আর আজকের কর্মসূচিতে পুলিশ যখন আমাকে গুলি করার জন্য শটগান উঁচু করে, তখন সে এসে আমাকে বলে, ‘‘চাচা ওরা গুলি করবে আপনি সরে যান’’। তাছাড়া আমি পদে আসার পর থেকে প্রায় ৩-৪ বছর ধরে বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সহ কর্মসূচিতে সক্রিয় দেখেছি।’

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমীর খসরু জানান, বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। তবে বিএনপির কতজন আহত বা নিহত হয়েছে তা নিশ্চিত না। একজন নিহত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে।

তিনি আরও জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়ক দখল করে সমবেশের চেষ্টা করে। এ সময়ে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তারা অনুরোধ প্রত্যাখান করে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।