না.গঞ্জে সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ী করে হত্যা মামলা

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে শাওন প্রধান (২১) নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিহতের বড় ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। এই মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়ী করা হয়েছে। 

মামলার এজাহারে শাওনের ভাই উল্লেখ করেছেন, ‘শাওন নবীনগর বাজারে শহিদুলের ওয়ার্কশপে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে আসছিল। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক সোয়া ১০টায় ওয়ার্কশপের মালামাল কিনতে বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে দুপুর আনুমানিক ১টার মোবাইলের মাধ্যমে সংবাদ পাই, শাওনের লাশ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মর্গে আছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করি।’

নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলা, গ্রেফতার ১০

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহতের ভাই মামলার এজাহারে আরও বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানতে পারি, ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টা হতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আনুমানিক পাঁচ হাজার নেতাকর্মী ইট-পাটকেল, লোহার রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ করেছিল। আমার ভাই শাওন বেলা পৌনে ১২টায় দুই নম্বর রেলগেট এলাকার পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে, এ সময় তাদের অবৈধ অস্ত্রের গুলি ও ইটের আঘাতে শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আমার ভাইকে গুরুতর জখম অবস্থায় রাস্তা থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন নিহত

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ‘রাতে নিহতের বড় ভাই মিলন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪-৫ হাজার আসামি করা হয়েছে, যারা সমাবেশে ছিল। শাওন ওই সমাবেশে এসেছিলেন। তবে কীভাবে এসেছিলেন এবং কীভাবে মারা গেছেন তা তদন্ত করে দেখছি।’

সংঘর্ষে নিহত যুবক রাজনীতি করতেন না, দাবি পরিবারের

নিহত শাওনের ভাই মামলার এজাহারে কাকে দায়ী করেছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের গুলিতে তার ভাই মারা গেছে এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমীর খসরু বলেন, হ্যাঁ, এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে। নিহত শাওন গ্যারেজে কাজ করতো, গ্যারেজের মালামাল কিনতে শহরে গিয়েছিল। তখন বিএনপির মিছিল যখন অতিক্রম করছিল, সে সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে ইট-পাটকেল বা কোনও কিছুর আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এটা তদন্তের বিষয়, তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।’

নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত যুবকের বাড়িতে মির্জা ফখরুল

 উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মী মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে শাওন মারা যান। এছাড়া বিএনপির প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী ও পুলিশের ১৫ জন আহত হন। পরে শাওনের পরিবার দাবি করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। তবে জেলা বিএনপির নেতারা দাবি করে, তিনি যুবদলের কর্মী ছিলেন। শাওন প্রধান সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নে পূর্ব গোপালনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে।