ভাঙন ঠেকাতে ফেলা জিওব্যাগে নিম্নমানের বালু, অভিযোগ স্থানীয়দের

পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত চার দিনে ফেরিঘাট এলাকায় প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। নতুন করে ৭ নম্বর ফেরিঘাটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় গত মঙ্গলবার থেকে বন্ধ থাকা ৫ নম্বর ফেরিঘাট চালু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে ভাঙন প্রতিরোধে ফেলা জিওব্যাগে নিম্নমানের বালু ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। ব্যাগে মোটা বালুর পরিবর্তে ভরাট বালু ব্যবহারের অভিযোগে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখেন এলাকাবাসী। এ সময় সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলীসহ ঘাট সংশ্লিষ্টরা মিলে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। পরে বেলা ১১টার দিকে আবারও কাজ শুরু হয়।

আরও পড়ুন: দিনে ফেলা জিওব্যাগ রাতেই ভেসে যাচ্ছে

স্থানীয় বাসিন্দা মোমিন মোল্লা বলেন, ‘আগে আমাদের বাড়ি ছিল লঞ্চঘাট এলাকায়। চার বছর আগে ভাঙনে ভিটেবাড়ি হারিয়ে ৫ নম্বর ফেরিঘাটে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙন ঠেকাতে নদীশাসন হবে বলে বহুবার শুনেছি। কিন্তু কোনও কাজই হচ্ছে না। এর মধ্যে আবার মঙ্গলবার থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে। কিন্তু জিওব্যাগে ভরাট বালু দিলে কিছুদিন পর সেই বালু গলে বস্তা খালি হয়ে যায়।’

জিওব্যাগে নিম্নমানের বালু ব্যবহারের অভিযোগ স্থানীয়দের

এদিকে নদী ভাঙনের কবল থেকে দৌলতদিয়াবাসীকে রক্ষার দাবিতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দৌলতদিয়া নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, ‘জিওব্যাগে মোটা বালু দেওয়ার কথা, কিন্তু সেটি না করে ভরাট বালু দেওয়া হচ্ছে। দুই দিন আগে ফেলা বস্তা খালি হয়ে গেছে। আবার প্রতিটি বস্তায় পরিমাণে কম বালু দেওয়া হচ্ছে। তাই এলাকাবাসীর স্বার্থে এ ধরনের ভরাট বালু ব্যবহার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ভরাট বালু ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের ভরাট বালু ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই। জরুরি ভিত্তিতে বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধানে স্থানীয়ভাবে জিওব্যাগ ফেলানোর কাজ চলছে। এছাড়া ৭ নম্বর ঘাট এলাকায়ও ভাঙন দেখা দেওয়ায় সেখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলানো হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: পদ্মার ভাঙনে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের মধ্যে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে তীব্র স্রোত থাকায় সব ঘাটে ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ৫টি ঘাটের মধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ৫ নম্বর ঘাটের আংশিক অংশ ভেঙে গেছে। এতে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম ঘাট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

নদী শাসনের দাবিতে শুক্রবার মানববন্ধন করেছেন দৌলতদিয়াবাসী

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, ‘৫ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকায় তীব্র স্রোতের বিপরীতে কোনও ফেরি ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে সহজে যেতে চায় না। ফলে ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে চাপ পড়ছে। এ কারণে ৫ নম্বর ঘাট দ্রুত চালুর অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৬ সেপ্টেম্বর ঘাট এলাকার ৫০ মিটারের মতো অংশ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। চার দিনে আরও ৫০ মিটারের মতো নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের ফলে ৫ নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ আছে। আপাতত এই ঘাট চালু করার সম্ভাবনা নেই। পানি কমলে চালুর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’