‘এবার ভাঙলে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না’

গত কয়েকদিনে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। পাশাপাশি ভাঙন আতঙ্কে নিজ ভিটেমাটি থেকে অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন বসতঘর।

পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে জেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরদারকান্দি, শম্ভু হালদার কান্দি, মহেশপুর ও শান্তনগর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা। এ ছাড়া ভাঙন হুমকিতে রয়েছে ওই ইউনিয়নের বাংলাবাজার, ইসলামপুর ও ভুত্তারচর গ্রাম। চোখের সামনে নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া ভিটেমাটি, বসতভিটা ও ফসলি জমি। সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা ওই এলাকার মানুষ। দিন দিন ভেঙে ছোট হচ্ছে বাংলাবাজার ইউনিয়নের মানচিত্র।

মহেশপুর গ্রামের আসলাম শেখ বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়েছি। এই ভাঙন প্রশাসনের চোখে পড়ে না। আমাদের পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম তার এলাকায় বালুর মাঝখানে পাথর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে। সেখানে তেমন একটা ঘনবসতি নেই, সেখানে তিনি বাঁধ নির্মাণ করে দিয়েছেন। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আপনি আসেন একটু দেখেন আমরা কী কষ্টে জীবন পার করছি। আমাদের সন্তান ও মা-বাবা নিয়ে কতটা কষ্টে আছি। অন্য একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

ইসলামপুর এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যখন ছোট ছিলাম প্রায় ৩০ বছর আগে একবার পদ্মা নদীতে আমাদের ভিটেমাটি হারিয়েছি। সেবার নদীতে বাড়িঘর জমিজমা হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছিলাম। তারপর ইসলামপুর এলাকায় এসে অন্য আরেকজনের জায়গায় ঘর উঠিয়ে থাকছি, আর একটা মিষ্টির দোকানে কাজ করে চলছি। এখন যে জায়গাটিতে থাকছি, নদীতে ভাঙতে ভাঙতে প্রায় বাড়ির কাছাকাছি চলে আসছে। এবার ভাঙলে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। একেবারেই নিঃস্ব হয়ে যাবো।’

ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন

সরদারকান্দি এলাকার মায়া সাহা বলেন, ‘গত দুদিনে পদ্মার ভাঙনে আমাদের বাড়িঘর চাষাবাদের জমি বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমাদের মন্দির বিলীনের পথে। জমিতেই চাষাবাদ করেই সংসার চলে। দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরও এই চাষাবাদ থেকেই আসে। আমাদের এখন একটাই দাবি, যেভাবেই হোক এখানে একটা বেড়িবাঁধ দিলে আমরা সবাইকে নিয়ে নিজের এলাকায় বসবাস করতে পারি।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে যোগাযোগ করেও ভাঙন প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র সংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আজ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নদীতে কী পরিমাণ গভীরতা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন হয়েছে। ৫০০ মিটার এলাকায় ভাঙন তীব্র। এত বড় এলাকায় ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার মতো কোনও সুযোগ নেই। কারণ এখানে বাঁধ দিতে আনুমানিক ছয় কোটি টাকার মতো লাগবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠাবো। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। গত শুক্রবার দুপুরে সংসদ সদস্য  নদী পাড়ের ভাঙন পরিদর্শন করেন এবং ভাঙন কবলিত বাংলাবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের খোঁজ নেন। নদী ভাঙনের শিকার মানুষদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের জোর দাবি, এখনই যদি ভাঙন ঠেকাতে না পারে তাহলে হয়তো একসময় বাংলাবাজার আর মানচিত্রে থাকবে না।