X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

ধনাগোদা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে জমি-ঘর

ইবাহিম রনি, চাঁদপুর
১৩ মে ২০২৫, ১১:০৭আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১১:০৭

ধনাগোদা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর, বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমি। কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনে অনেক জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার কমপক্ষে ১৫টি স্থানে ভাঙনে প্রতিদিনই নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে বাদাম, ভুট্টা, ধান ক্ষেতসহ ফসলি জমি। এতে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।

ভাঙনকবলিতরা জানান, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে ধীরে ধীরে ধনাগোদা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে মতলব উত্তর উপজেলার চরমাছুয়া, চরলক্ষ্মীপুরের কয়েকশ একর ফসলি জমি। বিলীন হয়েছে বহু ঘরবাড়ি। এ ছাড়া ধনাগোদা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে আমিরাবাদ, জহিরাবাদ, এখলাছপুর, গৌরিপুর, ষাটনল ও হাঁপানিয়া এলাকায়। এসব এলাকার বসতবাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার ও ঈদগাঁ ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীর ভাঙনের শিকার হচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। গত তিন মাস ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। অনেক ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে আকুতি করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। বছরের পর বছর মিলেছে শুধু আশ্বাস।

ধনাগোদা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে জমি-ঘর

নদীবেষ্টিত চরলক্ষ্মীপুরের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দার অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নদী ভাঙনের কারণে এখানকার কৃষকরা প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। ভাঙনের যে তীব্রতা দেখা দিয়েছে, তাতে গ্রামবাসী এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

চরলক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধা হনুফা বেগম বলেন, ‘আমাগো বাড়ি ঘর সবই আছিলো, সবই দাইব্বা গেছেগা। বহু বছর ধইরাই ভাঙতাছে, আমাগো জমি রক্ষায় কোনও সরকার পদক্ষেপ নেই নাই। আমরা বাস্তুহারা মানুষের মতো জীবন যাপন করতাছি।’

এ গ্রামের আরেক বৃদ্ধা আমেনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নদীর এপার থেকে হেপার আইছি, এপারও ভাঙতাছে। কোনও সরকার পদক্ষেপ নেয় নাই। এহন দয়া কইরা যদি এই সরকার কিছু করে, আর নইলে আমাগো কোনও উপায় নাই। রাত অইলেই আমাগো অনেক ভয় লাগে, ঘুম আসে না। এন্দা ভাইঙা যায় গা, হেন্দা ভাইঙা যায়গা।’

ধনাগোদা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে জমি-ঘর

ভাঙনের শিকার বারেক খান বলেন, ‘এলাকাটি মতলবের সুলতানাবাদ ইউনিয়নের চরলক্ষ্মীপুর গ্রাম। এর চারপাশ দিয়েই নদী। এখানে বর্তমানে আমরা দুই হাজার লোক বসবাস করি। আগে আরও বেশি ছিল। কিন্তু ভাঙনের কারণে অনেকে এলাকা ছেড়ে গেছেন। যাদের কোনও জায়গা জমি নাই, তারা বিপদে পড়ে বাঁধের ওপর ঠাঁই নিয়েছেন।’

ভাঙন আতঙ্কে থাকা যুবক হোসেন বেপারী বলেন, ‘নদী ভাঙনের কারণে কখন কী হয় বলা খুব মুশকিল। গত দুই মাসেও অনেক জমি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের এখানে একটি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও কবরস্থান এখন ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাই অতি দ্রুত নদী ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি গোলাম নবী খোকন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ধনাগোদা নদীর ভাঙনে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানালেও কার্যকর তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

ধনাগোদা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে জমি-ঘর

চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এ এইচ এম জামাল সাকিব বলেন, ‘পুরো গ্রামবাসীর জন্য এই একটি মাত্র স্কুল রয়েছে এখানে। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় স্কুলের কাছে চলে এসেছে। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে স্কুল ও গ্রামবাসীকে রক্ষা করা যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ আমাদের ভাঙন কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করেছেন। তাই তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব এই গ্রামটিকে রক্ষা করতে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনা ধনাগোদার নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম শাহেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরজমিনে আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা দেখেছি। নদী ভাঙন রোধে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

তিনি বলেন, ‘মেঘনার ধনাগোদা নদীর পাড়ে কয়েকটি স্পটকে ভাঙনকবলিত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছি। ইতোমধ্যেই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠিয়েছি। আমরা কিছু বরাদ্দ চেয়েছি এবং সামান্য হলেও কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিছুদিনের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করে খুব দ্রুত আমরা কাজ শুরু করবো। তবে ইতোমধ্যে আমরা কালিপুর বাজার, হাঁপানিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে প্রটেকশন দেওয়া শুরু করেছি। ফরাজিকান্দি, জহিরাবাদ, চরমাছুয়া এবং চরলক্ষ্মীপুর এলাকায় খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।’

/এফআর/
সম্পর্কিত
কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
বগুড়ার আড়িয়াঘাট সেতুবালু তোলায় হুমকিতে ৫০ কোটি টাকার সেতু
সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে ব্রহ্মপুত্র, রসুলপুরে এখন শুধু ভাঙন হাহাকার
সর্বশেষ খবর
জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৪, কৃষকের কব্জি বিচ্ছিন্ন
জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৪, কৃষকের কব্জি বিচ্ছিন্ন
শিল্পী ও সাবেক এমপি মমতাজের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন
শিল্পী ও সাবেক এমপি মমতাজের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন
হাইকোর্টের রায় স্থগিত: নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ
হাইকোর্টের রায় স্থগিত: নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ
তেজগাঁওয়ে ময়লার স্তূপে শিশুর মরদেহ, গায়ে আঘাতের চিহ্ন
তেজগাঁওয়ে ময়লার স্তূপে শিশুর মরদেহ, গায়ে আঘাতের চিহ্ন
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়