পুলিশ হেফাজতে বাবার মৃত্যু, থানায় লাশ রেখে পরীক্ষা দিলেন ২ সন্তান

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়িতে লেবু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর লাশ থানায় রেখেই তার দুই ছেলে-মেয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর শোক ও মনে চাপা ক্ষোভ নিয়েই মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ছেলে মৃদুল এসএসসি ও মেয়ে শিউলী আক্তার ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন।

লেবু মিয়া বাঁশতৈল গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে। এর আগে, সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক নারীকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাকেসহ দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ফাঁড়িতেই তার মৃত্যু হয়। তাকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ তোলেন পরিবার। তবে পুলিশের দাবি, তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালে সখিনা বেগম (৪৩) নামের এক নারীর লাশ তার ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে ওই নারীর পরিবার শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ তোলেন। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সখিনার সাবেক স্বামী মফিজুর রহমান ও একই এলাকার লেবু মিয়াকে দুপুরে উপজেলার বাঁশতৈল ফাঁড়ির এসআই সেলিম রেজা ও নেছার উদ্দিন আটক করেন। এরপর সকালে ফাঁড়ি থেকে খবর আসে লেবু মিয়া ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

পরিবারের অভিযোগ, তাকে নির্যাতন করে হত্যার পর পুলিশ আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিচারের দাবিতে আজ দুপুরে এলাকাবাসী বাঁশতৈল বাজারের সখীপুর-গোড়াই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

একটি সূত্রে জানা গেছে, সখিনা বেগমের সঙ্গে লেবু মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জেরেই প্রায় আট বছর আগে সখিনা ও মফিজুরের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।

লেবু মিয়ার ভাবি রুকেয়া বেগম দাবি করেন, ‘সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আমার দেবরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তখন তার পরনে ছিল একটি গেঞ্জি ও লুঙ্গি। পুলিশ বলছে, রশিতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার দেবর রশি পেলো কই? তাকে পুলিশ নির্যাতন করে হত্যার পর নাটক সাজাচ্ছে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘লাশ থানাতে রেখেই তার ছোট ছোট দুই ছেলে-মেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। বাবার মৃত্যুর শোকের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তারা পরীক্ষায় বসে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের পরীক্ষা কেমন হয়েছে বলতে পারছি না।’

লেবু মিয়ার স্ত্রী আলিয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। তবুও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেলো। ফাঁড়িতে নিয়ে তাকে নির্যাতনের পর মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশ এই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে দাবি করছে। স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ইদ্রিস আলী দাবি করেন, ‘বাঁশতৈল ফাঁড়ির এসআই সেলিম তাকে আটক করে নিয়ে যান। পরে তাকে বেদম মারধর করা হয়। একপর্যায়ে লেবু মারা গেছেন। পুলিশ এখন আত্মহত্যার নাটক সাজাচ্ছে। আমরা এসআই সেলিমের বিচার দাবি করছি।’

বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে সাবেক স্বামী মফিজুর রহমান ও একই এলাকার লেবু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই ঘটনায় তাদের দুজনকে আটক করা হয়। পরে লেবু হাজতখানায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ফাঁড়িতে কোনও ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। এসআই সেলিম ও নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা।’

ফাঁড়ির হাজতে রশি এলো কোথায় থেকে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত রশিটি তার সঙ্গেই ছিল।’

মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, ‘ওই ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করছি।’