‘হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে দেখি রান্নাঘর নদীগর্ভে’

‘তখন রাত ৩টা। চারপাশ নীরব-নিস্তব্ধ। হঠাৎ কীসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে বাইরে এসে দেখি আমার রান্নাঘরের কিছু অংশ নেই, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কী করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঘরে ঘুমিয়ে থাকা সন্তানদের বের করবো, নাকি আসবাবপত্র উদ্ধার করবো?’

কথাগুলো বলছিলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাটের পাশে অবস্থিত ষাটোর্ধ্ব সালাম বেপারী। গত বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পদ্মা নদীর ভাঙনে দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাট ও ঘাটের পাশে অবস্থানরত পাঁচটি পরিবারের বসতঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। সেই সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে সালাম বেপারীর রান্নাঘর। বসতঘরও ঝুঁকিতে রয়েছে। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাট। অন্যত্র ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে ঘাটের আশপাশে বসবাসরত পরিবারগুলো।

এদিকে পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে গত ৬ সেপ্টেম্বর দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট নদীগর্ভে চলে যায়। ওই ফেরিঘাট প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া ঘাটে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাতটি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট কয়েক বছর ধরে বিকল। চলতি মাস থেকে ৫ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাটের কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে। সচল রয়েছে ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট। জরুরিভাবে নদী শাসনের কাজ না করলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট নদীগর্ভে চলে যাবে।

ফেরিঘাট রক্ষার্থে বালভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলছে

বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা বন্দরের অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত ৩টার পর থেকে হঠাৎ ৩ নম্বর ফেরিঘাট ও ঘাটের নিচের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। জরুরিভাবে ফেরিঘাট রক্ষার্থে বালভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলছে।

নদীভাঙন কবলিত ছালাম শেখের স্ত্রী হাজেরা বেগম বলেন, ‌‘কোথায় যাবো? কী করবো? কে আমাদের এতটুকু ঘর বানানোর জায়গা দেবে? কয়েকবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। জায়গা জমি থাকলে আমরা কি নদীর পারে এসে বসবাস করতাম?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাতে যখন নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে তখন আমাদের রক্ষা করতে কেউ আসেনি। কে আসবে? আমাদের কাছে আসে শুধু শুনতে, ভোট চাইতে। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে তারা আর আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না। আমরা কি সরকারের কোনও সহযোগিতা পাবো না?’

ভাঙনকবলিত হারুন সরদার বলেন, ‘ভাঙন শুরু হলে নদীতে বস্তা ফেলানোর কাজ শুরু হয়। কিন্তু যখন শুকনো মৌসুম থাকে তখন কোনও কাজ হয় না। ভাঙন শুরু হলে তারা তড়িঘড়ি করে। এভাবে চললে মানচিত্র থেকে দৌলতদিয়া ঘাটের নামই থাকবে না।’

বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে রাত ৩টা থেকে ৩ নম্বর ফেরিঘাট নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় সকাল থেকে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। এই কাজ চলমান থাকবে।’