জমকালো শাড়ি-গয়না ছুঁয়েছে প্রিয়জন হারানোর বিষাদ 

যে বাড়িতে বইছিল বিয়ের আনন্দ বাতাস, হঠাৎ দুর্ঘটনায় সে বাড়ি এখন শোকে স্তব্ধ। পড়ে থাকা কনের জমকালো শাড়ি-গয়নাও ছুঁয়েছে সেই বিষাদ। দুর্ঘটনায় তানজিদের মৃত্যুর খবরে বর-কনে দুই পরিবারেই এখন প্রিয়জন হারানোর মাতম। 

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার তানজিদ মোল্লার সঙ্গে সাবরিনা সুলতানার বিয়ে হয় এক মাসে আগে। অনুষ্ঠান সূচি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে রবিবার (২৩ অক্টোবর) গায়ে হলুদ, সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ছিল। নতুন জীবন শুরু করার আনন্দ নিয়ে শনিবার রাতে ঢাকা থেকে বন্ধুদের নিয়ে লঞ্চে শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তানজিদ। কিন্তু যাত্রাপথে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে লঞ্চের ছাদ থেকে নিচে পড়ে পানির ট্যাংক। আর তাতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান গোসাইরহাটের শাহ আলী মোল্লার ছেলে বর তানজিদ, তার বন্ধু জামালপুরের বোরহান আলীর ছেলে সাগর আলী, টাঙ্গাইলের নাজিম উদ্দিনের ছেলে শাকিল আহমেদ। তারা তিন জনই গাজীপুরের একটি তৈরি পোশাককারখানার শ্রমিক। 

কনের গায়ে হলুদের শাড়ি-গহনাতাদের লাশ গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়নাতদন্তের জন্য বিকাল ৪টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। আর আহত সাগর (১৮) ও হীরাকে (২৪) হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সেতুতে লঞ্চের ধাক্কা, ৩ যাত্রী নিহত

এদিকে সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লাগা তিন যাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনায় ঢাকা-ডামুড্যাগামী স্বর্ণদীপ প্লাস লঞ্চটি জব্দ করা হয়েছে। এ সময় লঞ্চের মাস্টার নুরজামান ও চালক ইমরান নামে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। ভোর চারটার দিকে গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি জয়ন্তী নদীতে প্রবেশের সময় সাইক্কা ব্রিজের সঙ্গে লঞ্চটির ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটে। পরে লঞ্চটি সকাল ৭টার দিকে নোঙর করলে লঞ্চটি জব্দ করে গোসাইরহাটের পট্টিঘাটে রাখা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাটের সাইক্কা এলাকায় সেতুর সঙ্গে লঞ্চের তৃতীয় তলায় থাকা পানির ট্যাংকের ধাক্কা লাগে। পানির ট্যাংক ছিটকে ঘুমন্ত যাত্রীদের ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন যাত্রী মারা যান। আহত হন দুই জন।

নিহত তানজিলের স্ত্রী সাবরিনা জানান, তানজিদের সঙ্গে গতকাল রাত ১১টার দিকে কথা হয়েছিল। কিন্তু সকালটা কালো মেঘে অন্ধকার হয়ে উঠলো। কান্না জড়িত কণ্ঠে সাবরিনা বলেন, মেয়েদের জীবনে বিয়ে হয় কতবার, আমারতো সব শেষ হয়ে গেলো।

তানজিদের মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই।

ভাই সজিব বলেন, আমার ভাইয়ের বিয়েতে আমরা সবাই এসেছিলাম। তারা তিন বন্ধু ছাদের উপরে উঠেছিল, হঠাৎ একটি শব্দ শুনতে পাই। গিয়ে দেখি আমার ভাই শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে কনে সাবরিনার বোন মৌসুমী জানান, ঢাকা থেকে এসেছিলাম আনন্দ নিয়ে বোনের বিয়েতে। আজ ছিল বোনের গায়ে হলুদ। তানজিদের মৃত্যুতে আমাদের আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে। আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো।

গোসাইরহাট থানার উপ-পরিদর্শক মো. মতিউর বলেন, ঘটনার পর তাৎক্ষণিক আমরা সেখানে গিয়ে তাদের উদ্ধার করেছি। বিকালে মৃত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি। এছাড়া দুই জনের একজনের চিকিৎসা দেওয়া গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আর আরেকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় দু'জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাফি বিন কবির বলেন, দুর্ঘটনার পর লঞ্চের চালক ও সহকারীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।

এছাড়াও তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিবারের পাশে সাধ্যমতো থাকার চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন।