‘এই সেতু পার হতে গেলে বুক ধড়পড় করে’

গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে সেতুর নিচ থেকে মাটি ধসে এর মাঝের অংশ দেবে যায়। পরে নভেম্বর থেকে যান চলাচল বন্ধ রাখতে বলে প্রশাসন। কিন্তু এখনও বন্ধ না হওয়ায় যেকোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

এমন বেহাল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত জরাজীর্ণ সেতুটির। এর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০২-০৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে তেনাপচা খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট বা ছোট সেতু নির্মাণ করা হয়। তেনাপচা আশ্রয়ণ ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) এলজিইডি সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত সেতুটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ী জেলা কার্যালয় জানায়, ৬৪ জেলার খাল খনন প্রকল্পের আওতায় গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাল খনন প্রকল্পের কাজ ২০১৮-২০১৯ থেকে শুরু করে ২০২০-২১ অর্থবছরে শেষ হয়। প্রায় ২৫ ফুট চওড়া এবং ৪ ফুট গভীর খনন প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছিল ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

পাউবো রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে তেনাপচা পদ্মা নদী থেকে ছোটভাকলা ইউপির কেউটিল হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাজটির দায়িত্ব পায় ঢাকার মতিঝিল টিটিএসএল-এসআর নামক একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।

সরজমিনে দেখা যায়, সেতুটির মাঝখান থেকে দেবে গেছে। এর দুপাশের মাটি সরে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন, মানুষ চলাচল করছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব শেখ বলেন, ‌‘খালপাড় ভেঙে যাওয়ায় আমাদের বাড়িঘর থাকছে না। কয়েক মাস ধরে খাল পাড়ে কাজ শুরু হলেও তেমন গতি দেখছি না। এখন আবার এই খালে পানি আসতে শুরু করেছে। জানি না আমাদের ঘরবাড়ি কি থাকবে নাকি ভেঙে যাবে।’

স্থানীয় অটোরিকশাচালক আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘আর কত দিন আমরা যাত্রী নিয়ে এভাবে ঝুঁকিতে ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করবো? কয়েক দিন আগে সেতু পার হতে গিয়ে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতার ভ্যান নিচে পড়ে তার অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই সেতু পার হতে গেলে বুক ধড়পড় করে। সেতুটি নতুন করে তৈরি করা হলে আমরা দুশ্চিন্তামুক্ত হবো।’

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষাকালে প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাশের মাটি ধসে ব্রিজটি দেবে গেছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় গত বছরের নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। হালকা যান ও পথচারী চলাচল অব্যাহত থাকায় যেকোনও মুহূর্তে ব্রিজটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল সরদার বলেন, ‘খালের উভয় পাশে বাড়িসহ স্থাপনা থাকায় শিডিউল অনুযায়ী খনন সম্ভব হয়নি। খাল অনুযায়ী ব্রিজটি সঠিক মাপে করা হয়নি বলে পানিপ্রবাহের চাপে ব্রিজের কয়েক স্থান ধসে গেছে। স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে দুটি গ্রুপের প্যালাইসাডিং কাজ করা হয়েছে।’

উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেতুটির নকশার কাজ চলমান রয়েছে। এটি করার আগে দুই পাশের পাকা সড়কের কাজ করা হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পিডি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু করতে পারবো।’