সিত্রাংয়ের প্রভাবে মাদারীপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মাদারীপুরের পাঁচটি উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর ও কালকিনি উপজেলায়। এচাড়া শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিন সদর, শিবচর ও কালকিনি উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পাকা ও আধাপাকা ধান জমিতে নুয়ে পড়ে। হেলে পড়েছে বাঁশঝাড় ও কলাগাছ। পালংশাকের ছোট ছোট চারা, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো ও মুলাসহ বিভিন্ন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সদ্য লাগানো পালংশাকের চারা পানিতে ডুবে গেছে।

শিবচরের উত্তর বাঁশকান্দি এলাকার কৃষক আবুল ঘরামী বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে করলা, বেগুন, লাউ ও শসার চাষ করেছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সবজি চাষে আমার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।’

ভদ্রাসন এলাকার কৃষক কালাম তালুকদার বলেন, ‘তিন বিঘা জমির কলাগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকগুলো কলাগাছ কলা ধরছিলো। এবার পুরো লোকসানে পড়ে গেলাম।’

মাদারীপুর-২

শিবচরের বন্দরখোলা এলাকার কৃষক মুসা হাওলাদার জানান, তাদের এলাকা শিবচরের চরাঞ্চলে হওয়ায় জমিতে পানি জমে গেছে। তিনি তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট অতিবৃষ্টির কারণে সম্পূর্ণ জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন মাথায় হাত। শুধু তারই ক্ষতি হয়নি, এলাকার আরও অনেকের ফসল পানিতে ডুবে আছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি উপজেলায় মোট ৩১০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন ধান ১০৯ হেক্টর, বোনা আমন ধান ৩৪ হেক্টর, শাক সবজি ৯৫ হেক্টর, মাষকলাই ৫ হেক্টর, মরিচ ১০ হেক্টর, পেঁয়াজ সাড়ে ১২ হেক্টর, মরিচ ২০ ও অন্যান্য ২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।  

মাদারীপুর-৩

এদিকে সিত্রাংয়ের কারণে সবজির ক্ষতি হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে। গত দুই দিন (শুক্র ও শনিবার) শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর, পাচ্চর, চান্দেরচর ও পৌর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়স ৭০, পটল ৬০, পেঁয়াজ ৫০, ফুলকপি ১০০, শিম ১০০, করলা ৭০, গাজর ১৪০, বরবটি ৮০, কাকরোল ৮০, পেঁপে ৩০, ঝিঙা ৭০, বেগুন ৫০, আলু ৩০, মরিচ ৮০ থেকে ১০০, লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মাদারীপুরের ৩১০ হেক্টর জমির রোপা আমন, বোনা আমন, বোরো ধান ও শাকসবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর ও কালকিনি উপজেলায়। আমরা ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করছি। পরে উপজেলা কমিটির মিটিংয়ে মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষেত থেকে কৃষকদের অতিরিক্ত পানি সরিয়ে ফেলার কথা বলছি। পাশাপাশি নতুন করে চারা রোপণেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’