সোয়া ২০০ মে.টন চাল উধাও, খাদ্যগুদাম সিলগালা 

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে প্রায় সোয়া ২০০ মে.টন চাল উধাও হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গুদামটি সিলগালা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার পর থেকেই উপজেলা গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সানোয়ার হোসেন লাপাত্তা। গুদামের চাল আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন প্রায় সোয়া ২০০ মে.টন চাল আত্মসাৎ করার পর গত চার মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিডি কার্ডের চাল ও ডিলারদের ১৫ টাকা কার্ডের চাল সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে উপজেলার হত দরিদ্ররা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে নথিপত্র যাচাইয়ে চাল আত্মসাতের ঘটনাটি ধরা পড়ে। 

বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মাহবুবুর রহমান, ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক) মো. তারিকুজ্জামান, মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেন ও চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলমের উপস্থিতিতে গুদামের নথিপত্র যাচাই করে গুদামটি সিলগালা করেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রশিক্ষণে দেশের বাইরে থাকায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তারিকুজ্জামান। তিনি বলেন, গুদামের নথিপত্র যাচাই করতে গিয়ে আমরা অনেক গড়মিল পাই। যাচাইয়ের এক পর্যায়ে বড় অঙ্কের চাল আত্মসাতের ঘটনা বেরিয়ে আসে।

তিনি আরও বলেন, গুদামের চাল আত্মসাতের ঘটনায় মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইসমাইল হোসেনকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর দুই জন চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল আলম ও ঢাকা বিভাগীয় অফিসের একজন কর্মকর্তা।

তারিকুজ্জামান বলেন, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।

চরভদ্রাসন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল আলম বলেন, আপাতত গুদামটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে উপজেলা ওসিএলএসডি সানোয়ার হোসেন গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে কয়েক দফায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং গুদামে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

মোবাইলফোনে গত কয়েকদিন ধরে সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে একবার ফোন রিসিভ করলেও ‘ভাই আমি অসুস্থ, পড়ে কথা বলবো’, বলে কল কেটে দেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ খান জানান, ওই ওসিএলএসডি গত চার মাস ধরে আমার ইউনিয়নের প্রায় ৮০ মে.টন চাল সরবরাহ করেন নাই। একইভাবে উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ২০০ মে.টন. ভিজিডি কার্ডের চাল সে আত্মসাৎ করেছেন। আমি গত বুধবার রাতে ওসিএলএসডির নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার বলেন, উপজেলার সাত ডিলারের মধ্যে নির্দিষ্ট এক ডিলারের সঙ্গে আঁতাত করে ওসিএলএসডি প্রায় কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ করে লুকিয়ে রয়েছেন।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, গুদাম সিলগালার বিষয়ে এখনও আমার কাছে কোনও চিঠি আসেনি।