একটি সাঁকো ভেঙে দুর্ভোগে হাজারো কৃষক

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ও বহরপুর ইউনিয়নে একটি বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার কৃষককে। 

জানা গেছে, এলাকাবাসীর অর্থায়নে সাঁকোটি তৈরি করে ছোট পাওয়ার ট্রাক্টর, গবাদিপশু ও কৃষিপণ্যসহ এলাকার মানুষ যাতায়াত করতেন। বর্তমানে সেটি ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক। স্থানীয় এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দফতরে ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত  কোনও সুফল পায়নি।

বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের খামারমাগুরা-হাতিমোহন খালে দেখা যায়, বাঁশের সেতুটি ভেঙে পড়ে আছে। খালের দুই কিলোমিটার এলাকার কৃষকদের কৃষিপণ্য পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল সাঁকোটি। খালের পূর্ব পাশে জামালপুর ইউনিয়ন। খাল পার হয়ে পশ্চিমপাশে বহরপুর ইউনিয়ন। ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই খালটি খনন করে। সারা বছর খালে পানি থাকে। দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষকের জমি রয়েছে উভয় পাশে। ফলে কৃষিপণ্য ও কৃষিযন্ত্র পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। জামালপুর ইউনিয়নের কৃষক তাদের পাওয়ার ট্রাক্টর নিয়ে বহরপুর ইউনিয়নে নিজ জমিতে যেতে পারছেন না। আবার খাল পাড়ি দিয়ে উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়া করতে চরম দুর্ভোগ পড়তে হচ্ছে তাদের।

Rajbari-2

জামালপুর ইউনিয়নের কৃষক সোহরাব শেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে ছোট একটি সেতু হলে দুই ইউনিয়নের লোকজনের অনেক উপকার হতো। আমাদের মতো যারা কৃষক আছেন তাদের ফসলও আনতে সুবিধা হতো। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অনেকবার বলার পরও তারা কোনও পদক্ষেপ নেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার সময় এখানে প্রচুর পানি জমে থাকায় কোনও ফসল হয় না। শুষ্ক মৌসুমে পেঁয়াজ, রসুন ও গমসহ বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়। কৃষকদের খাল পার হতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয়। সবাইকে খালের পানিতে ভিজে পারাপার হতে হয়।’

আরেক কৃষক ছালাম শিকদার বলেন, ‘এই খাল পাড়ে আমার পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। এতদিন বাঁশের এই নড়বড়ে সাঁকো দিয়েই চলাচল ও ফসল আনার করতাম। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে। এই খালে একটি সেতু খুবই প্রয়োজন।’

স্থানীয় ট্রাক্টরচালক লালমিয়া খাঁ বলেন, ‘আমার একটি ছোট ট্রাক্টর রয়েছে। খালের ওপারে কৃষকদের জমি চাষাবাদ করে পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি। বেশকিছু দিন ধরে সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় আসা-যাওয়া করতে পারছি না। তাছাড়া এই সেতুটি দিয়ে এতদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতাম। একটা সেতু হলে দুই ইউনিয়নের জনগণের অনেক সুবিধা হতো।’

বালিয়াকান্দি উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমি এই দুই ইউনিয়নের কৃষকদের নিয়ে কাজ করি। কৃষকদের জন্য খামারমাগুরা-হাতিমোহন খালের ওপর একটি সেতু প্রয়োজন। সরকারের উচিত দ্রুত সেতু করে দেওয়া। সেতুটি নির্মিত হলে কৃষকের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে।’

বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি কয়েক বছর আগে সেখানে গিয়েছিলাম। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সেতুর ব্যাপারে জানিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব সেতুটি নির্মাণের চেষ্টা করছি।’