দুই শিক্ষার্থীকে গাঁজা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে মারধর, ২ কনস্টেবল প্রত্যাহার

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে দুই কলেজ ছাত্রকে গাঁজা দিয়ে অর্থ আদায়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে হরিরামপুর থানা পুলিশের দুই কনস্টেবল, ওসির ব্যক্তিগত সহকারী ও এক সোর্সের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক খালপাড় পদ্মা নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিনকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, অভিযুক্ত কনস্টেবল আব্দুল লতিফের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঘটনার বিষয়ে কোনও সংবাদ না করার অনুরোধ করেন।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ (২৪) এবং দেবেন্দ্র কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিন (২৪) দুই বন্ধু মিলে আন্ধারমানিক খালপাড় এলাকার পদ্মা নদীর পাড়ে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় দুই শিক্ষার্থীকে হরিরামপুর থানা পুলিশের দুই কনস্টেবল জব্বার ও লতিফের সহায়তায় ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলামের বাসার কাজের লোক মাসুদ ও আন্ধারমানিক গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে মামুন গাঁজা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

এ সময় ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে পুলিশ কনস্টেবল ও অভিযুক্তরা মারধর করেন। পুলিশ সদস্য জব্বার শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিনকে বেধড়ক লাথি কিল-ঘুসি এবং বাঁশ দিয়ে মারধর করেন। এ ছাড়া পুলিশের অপর সদস্য লতিফ ফয়সালকে মারধর করেন। তাদেরকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নেওয়ার চেষ্টাও করে। স্থানীয়রা আহত নিজামকে উদ্ধার করে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।

রামকৃষ্ণপুর ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল হক বলেন, আন্ধারমানিক পদ্মাপাড়ে ওসির ব্যক্তিগত কাজের লোক মাসুদ এবং স্থানীয় মামুন নামের যুবক দুজন ছাত্রকে মারধর করে। পরে থানার কনস্টেবল লতিফ ও জব্বারসহ দুজন এসে নিজাম ও ফয়সাল নামে দুই ছাত্রকে মারধর করেন।

হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মুসা জানান, আহত অবস্থায় নিজাম নামের এক যুবক হাসপাতালে আসে। আঘাতের ফলে তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, পুলিশসহ ওই দুই যুবক গাঁজা দিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ফাঁসাতে না পেরে ব্যাপক মারধর করেছে। মাসুদ থানার ওসির ব্যক্তিগত লোক। নিজেকে বিভিন্ন সময় পুলিশও পরিচয় দিয়ে থাকে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, পুলিশ দুই শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পিটিয়েছে। যা দুঃখজনক। বিষয়টি এসপি সাহেবকে জানিয়েছি। এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এদিকে, কনস্টেবল আব্দুল লতিফের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি ঘটনার বিষয়ে কোনও নিউজ না করতে অনুরোধ করেন।

হরিররামপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর রহমান দাবি করেন, গাঁজা দিয়ে ফাঁসানোর মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি। ওই দুই যুবকের সঙ্গে মামুন নামের এক যুবকের মারামারির ঘটনা ঘটেছে মাত্র।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান জানান, রাতেই তিনি হরিরামপুর থানা পরিদর্শনে গিয়ে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাদের দুজনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।