মীর সিমেন্টে বেড়েছে বিনিয়োগ, যাচ্ছে ভারতেও

গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে নারায়ণগঞ্জে উৎপাদিত মীর সিমেন্টের চাহিদা বেড়েছে। গত ২০ বছরে চার গুণ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দৈনিক ২৪০০ মেট্রিকটন সিমেন্ট উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালের মধ্যে মীর সিমেন্টের উৎপাদন পাঁচ হাজার মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সিমেন্ট রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

জেলার রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া গঙ্গানগর এলাকায় ৩৩ বিঘা জমিতে মীর সিমেন্টের কারখানাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১২০০-এর অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।

mir5

জানা গেছে, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে তিন ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এমনকি সিমেন্ট তৈরির উপাদান পরীক্ষার জন্য পৃথক ল্যাব রয়েছে। সেখানে উপাদানের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা শেষে সিমেন্ট উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। আধুনিক মেশিন ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে সিমেন্ট তৈরি ও প্যাকেজিং করা হয়।

mir4

মীর সিমেন্টের ইনচার্জ (কিউএ ও কিউসি) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০০৩ সালে মীর সিমেন্টের উৎপাদন শুরু হয়, তখন দৈনিক ৬০০ মেট্রিকটন উৎপাদন হতো। এখন সেই উৎপাদন বেড়ে গিয়ে দৈনিক ২৪০০ মেট্রিকটন উৎপাদন হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের শুরুতে দৈনিক পাঁচ হাজার মেট্রিকটন উৎপাদন হবে। এতে আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আট গুণ বাড়বে। পণ্যের চাহিদার ওপর নির্ভর করে মীর সিমেন্টের উৎপাদন বাড়ছে। এই চাহিদা তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে আসছি। তাছাড়া মীর সিমেন্টের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব পড়বে।’

mir2

সিমেন্ট রফতানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লিংকার, জিপসাম, লাইমস্টোন, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ এই পাঁচটি উপাদান দিয়ে সিমেন্ট তৈরি করা হয়। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপান, ভারত, ওমানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়। পরে অটোমেটিক মেশিন ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে তিন ধরনের সিমেন্ট তৈরি করা হয়। মূলত ওপিসি ও পিসিসি দুই ধরনের সিমেন্ট তৈরি হয়। তবে পিসিসি সিমেন্টের মধ্যে আবার এআর ও বিআর দুই ধরনের সিমেন্ট তৈরি করা হয়। তৈরি শেষে তিন ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বাজারজাত করা হয়। এ ছাড়াও দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই সিমেন্ট পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রফতানি করা হয়। বছরে প্রায় পাঁচ হাজার টন সিমেন্ট ভারতে বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়।’

mir6

পরে পুরো সিমেন্ট কারখানা ঘুরিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম দেখান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এ সময় সিমেন্ট উৎপাদন সম্পর্কিত নানা তথ্য যোগ করে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রডাকশন ও অপারেশন) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত পাঁচটি উপাদান প্রসেসিং করে বল মেশিনে ফেলা হয়। এখানে দুটি বল মিল মেশিনের একটিতে ১৮০০ ও অপরটিতে ৬০০ মেট্রিকটন সিমেন্ট উৎপাদন হয়। এই বল মিল মেশিনে সিমেন্ট তৈরির উপাদান মিক্সড ও চূর্ণ করে সিমেন্ট তৈরি করা হয়। পরে প্যাকেজিং শেষে কন্টেইনার ভর্তি করা হয়। সিমেন্ট তৈরির এই পুরো প্রক্রিয়ার ডায়াগ্রাম কন্ট্রোল রুমের কম্পিউটারের মনিটরে রয়েছে। সেখান থেকে সিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের পরিমাণ নির্ধারণসহ সমস্ত কিছু কন্ট্রোল করা হয়। সম্পূর্ণভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে।’

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক এস এম রহমতুল্লাহ বলেন, ‘২০০৩ সালে প্রাথমিকভাবে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে মীর সিমেন্ট কারখানা করা হয়। এখন সেই বিনিয়োগের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। আশা করছি, আগামীতে আরও বাড়বে।’