জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদে ফেরাতে কাউন্সিলরদের স্বাক্ষর জালিয়াতি

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে পদে ফেরাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে ৬১ কাউন্সিলর স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে ছয় কাউন্সিলর আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেননি বলে জানিয়েছেন। 

সোমবার (১৩ মার্চ) বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন এই ছয় কাউন্সিলর। একইসঙ্গে এটিকে স্বাক্ষর জালিয়াতি বলেছেন তারা।

রবিবার (১২ মার্চ) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর ৬১ কাউন্সিলর স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়। আবেদনপত্রে স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচ কাউন্সিলর অস্বীকার করেছেন। আরেকজন দেশের বাইরে থাকায় তার স্বাক্ষর অন্য কেউ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

আবেদনপত্রে বলা হয়, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কাউন্সিলর ও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। কিন্তু গত ১৫ মাসে প্যানেল মেয়রের (কাউন্সিলর) স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতা বর্তমানে চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। ফলে সিটি করপোরেশনটি সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এজন্য জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ফেরানো প্রয়োজন। গাজীপুরের উন্নয়ন ও আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে কাউন্সিলররা এ আবেদন করেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদে পুনর্বহাল চেয়ে ৬১ কাউন্সিলরের আবেদন সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ৬১ কাউন্সিলরের স্বাক্ষর সংবলিত আবেদনপত্রে নিজের নাম দেখে বিষয়টিকে জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেন ছয় কাউন্সিলর।

আবেদনপত্রে স্বাক্ষর থাকা সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ২২, ২৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছানা আক্তার বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমকে পুনর্বহালের কোনও আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করিনি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’

তাহলে আবেদনপত্রে আপনার স্বাক্ষর কীভাবে এলো জানতে চাইলে আফছানা আক্তার বলেন, ‘তাও জানি না। আমি সহজ-সরল মানুষ। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

আবেদনপত্রে কীভাবে নিজের স্বাক্ষর গেলো, তা জানেন না ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোন্তাজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দিয়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। তবে কাউন্সিলর হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর দিতে হয়। আবেদনপত্রে কখন কোথায় স্বাক্ষর দিয়েছি, এখন মনে পড়ছে না। এ ছাড়া দল জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় চাইলে তার মেয়র পদ ফিরিয়ে দিতে পারে। এখানে আমাদের কেন জড়ানো হচ্ছে, তা বুঝি না।’

ওই আবেদনপত্রে কোনোভাবেই স্বাক্ষর দেননি বলে জানালেন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হাসান আজমল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে পুনর্বহালের কোনও আবেদনপত্রে আমি স্বাক্ষর দিইনি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না। যদি ওই আবেদনে আমার স্বাক্ষর থাকে, তবে অন্য কেউ দিয়েছে। এটি জালিয়াতি ও প্রতারণা।’

একই কথা বলেছেন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহীনুল আলম মৃধা। তিনি বলেন, ‘মেয়র পদে জাহাঙ্গীর আলমকে পুনর্বহালের কোনও আবেদনপত্রে আমি স্বাক্ষর দিইনি। ওই আবেদনে আমার স্বাক্ষর থাকলে, তা জালিয়াতি করে দেওয়া হয়েছে।’

বিদেশে অবস্থান করায় ওই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার প্রশ্নই আসে না বললেন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলাল। তিনি বলেন, ‘আমি চেন্নাইতে ছিলাম। দুদিন আগে দেশে ফিরেছি। কাজেই আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এটি স্বাক্ষর জালিয়াতি।’

আবেদনপত্রের বিষয়ে কিছুই জানেন না উল্লেখ করে সংরক্ষিত ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিরিন আক্তার বলেন, ‘আবেদনপত্রের কথাই তো জানি না। কীভাবে কে স্বাক্ষর দিয়েছে, তাও জানি না।’

সিটি করপোরেশন কার্যালয় সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। পাশাপাশি ১৯ সংরক্ষিত পদে রয়েছেন ১৯ জন কাউন্সিলর। সর্বমোট ৭৬ জনের মধ্যে এক কাউন্সিলর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই অডিওতে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায় জাহাঙ্গীর আলমকে। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।