কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নেওয়ার কথা বলে সরকারি বরাদ্দের সিমেন্ট, বালু ও টিনভর্তি একটি ট্রলার মিয়ানমারে নিয়ে গেছে বাংলাদেশি কয়েকজন পাচারকারী। ওই ট্রলারে তিন জন মাঝিমাল্লা রয়েছেন।
বুধবার বিকালে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা থেকে টিআর প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দের এসব সিমেন্ট, বালু ও টিন ছাড় নেওয়া হয়। ওই দিন বিকালে এগুলো ট্রলারে তুলে সেন্টমার্টিনে নেওয়ার কথা বললেও বৃহস্পতিবার (০১ মে) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়নি বলে জানায় ট্রলার মালিক সমিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমান, সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল, নুরুল ইসলাম, আবদুল মুনাফসহ একটি চোরাকারবারি চক্র মিলে সরকারি কাজের কথা বলে এসব মালামাল মিয়ানমারে পাচার করে দিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্পের আওতায় আশিকুর রহমানকে গত ২৮ এপ্রিল উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা থেকে ৯ বান্ডিল টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টন টাইলস, ৩০০ ফুট বালু ও ২০ ব্যাগ সিমেন্ট বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন। মূলত পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দের অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে ২০ ব্যাগের স্থলে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট উল্লেখ করে নিয়ে যান আশিকুর। সেগুলো আবার সেন্টমার্টিন না নিয়ে মিয়ানমারে পাচার করে দিয়েছেন। যা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা এবং অপরাধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমানকে ২০ বস্তা সিমেন্টসহ কিছু মালামাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মালামালের অনুমতিপত্র তিনি জালিয়াতি করে ৪০০ বস্তা সিমেন্ট মিয়ানমারে পাচার করেছেন বলে খবর পেয়েছি। এ ঘটনা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে আশিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অনুমতিপত্র আমার নামে দেওয়া হলেও সেন্টমার্টিনের ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার তা রিসিভ করেন। পরে শুনেছি সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় আমি জড়িত নই। একটি চক্র আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অনুমতিপত্র হাতে পেলেও আমরা মালামাল বুঝে নিইনি। একটি চক্র অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে বরাদ্দকৃত মালামাল তুলে মিয়ানমারে পাচার করেছেন।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বিকালে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখিয়ে মো. সারোয়ার হোসেনসহ তিন জন মাঝিমাল্লা ৪০০ বস্তা সিমেন্ট, ৯ বান্ডিল টিনসহ বরাদ্দের মালামাল ট্রলারে তোলেন। এসব মালামাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহ। কেফায়েত সেন্টমার্টিনের চোরাকারবারি আক্তার কামালের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
কেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দের একটি অনুমতিপত্র আমাকে দিয়েছেন। সেটির বরাদ্দের মালামাল বুধবার বিকালে ট্রলারে তোলা হয়। আজ বিকালে জানতে পেরেছি, মালামালগুলো মিয়ানমারে পাচার করা হয়েছে। এতে আমি জড়িত নই।’
এ ব্যাপারে জানতে ইউপি সদস্য আক্তার কামালকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
কায়ুকখালী ঘাটের মাঝি আবদুল আলীম ওরফে আলম বলেন, ‘বুধবার বিকালে আক্তার কামালের নামে একটি অনুমতি দেখিয়ে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট, বালু ও টিন ট্রলারে তোলা হয়। ট্রলারটি পরে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। আজ জেনেছি, ভুয়া কাগজ দেখিয়ে মিয়ানমারে সিমেন্ট পাচার করা হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে মালামাল পাচার করে আসছে। তাদের আইনের আওতায় আনলে পাচার বন্ধ হবে।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টেকনাফ থেকে সিমেন্ট, বালু ও টিনবোঝাই একটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করলেও সেটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দ্বীপে পৌঁছেনি। ট্রলারটি মিয়ানমারে ঢুকে গেছে বলে জেনেছি।’