গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার এক উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। ঠিক কত টাকা নিয়ে তিনি লাপাত্তা হয়েছেন, তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম রোহিদ দাবি করেছেন, পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হতে পারে।

রবিবার (১৪ মার্চ) থেকে উপজেলার জিনারি ইউনিয়নের বোর্ডবাজার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখাটি বন্ধ থাকায় গ্রাহকরা বিপাকে পড়েছেন। তারা এজেন্ট মো. আলমগীর ও এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ব্যবস্থাপক রিপন মিয়াকে খুঁজে পাচ্ছেন না। অভিযুক্তদের ফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

এলাকাবাসী বলছে, এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে তিন জন যুক্ত থাকলেও লেনদেন ছিল আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। বাজারের লোকজন জানান, রবিবার থেকে শাখাটি বন্ধ দেখতে পাচ্ছেন তারা। আর এর সঙ্গে জড়িতদেরও দেখা যায়নি। এজেন্ট ব্যাংকিং হলেও এখানে সাধারণ ব্যাংকের মতো সবধরনের কার্যক্রম চালু ছিল।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে হোগলাকান্দি গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আলমগীর বোর্ডবাজারে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা চালু করেন। শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন একই গ্রামের রিটন মিয়া। এতে অংশীদার ছিলেন বীর কাটিহারি গ্রামের কেনু মিয়ার ছেলে মানিক মিয়া।

চরহাজীপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী রতন মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তার ২৭ লাখ, হোগলাকান্দি গ্রামের হৃদয় বাবু পাঁচ লাখ, একই গ্রামের মোক্তার উদ্দিন তিন লাখ, ফজলুর রহমান আট লাখ, আবুল কাসেম ১৪ লাখ, মিতু আক্তার দুই লাখ, মোজাম্মেল হক ৯ লাখ, মকবুল হোসেন সাত লাখ, ইমান আলীর ১০ লাখ, গড়মাছুয়া গ্রামের আব্দুল কদ্দুছের ১৪ লাখসহ শতাধিক গ্রাহক টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের সবাইকে একটি করে চেক দিয়েছেন আলমগীর। ভুক্তভোগীদের দাবি, প্রতি মাসে তারা লাখে এক হাজার টাকা করে সুদ পেতেন। 

স্থানীয়রা জানান, আলমগীর গ্রামের সাধারণ মানুষ ও প্রবাসীর পরিবারের লোকজনকে টার্গেট করে বলতেন, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে লাভ বা সুদ কম হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে টাকা না রেখে তার কথামতো রাখলে লাখ প্রতিমাসে হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাবে। আর এ লোভে পড়েই লোকজন টাকা দিয়েছে তাকে। অভিযুক্ত আলমগীর গ্রাহকদের জমা দেওয়া লাখ লাখ টাকার বিপরীতে সুদ বাবদ প্রতিমাসে নির্ধারিত টাকাও অনেকদিন ধরে পরিশোধ করে আসছিলেন। জমার রশিদ না দিয়ে টাকা জমা নিয়ে লাভের অংশ পরিশোধ করে আসছিলেন তিনি। ভালো আচরণ ও সঠিক লেনদেন করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেন। ফলে এলাকার লোকজন বিশ্বাস করতেন তাকে। আর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন তিনি।

জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম রহিদ দাবি করেন, আমার হিসাব মতে, লোকজনের পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই আলমগীর। এখন তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িঘরেও তালা ঝুলছে। প্রতারিত লোকজন আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করছে। আমি সবাইকে আইনি ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দিচ্ছি।

হোসেনপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাচ-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এরিয়া ম্যানেজার রোকনউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এর আগে তিনি কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাদের তিনি জানান, সোমবার থেকে বোর্ড বাজারের এজেন্টের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতে পারছেন না। অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, সম্ভবত ওই এজেন্ট ব্যক্তিগতভাবে, ব্যক্তিগত নথিপত্র ও চেক ব্যবহার লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। ফোনেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।