পিকনিকের ট্রলার ডুবে মারা যাওয়া ৮ জনকে একই গোরস্থানে দাফন

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার শাখা নদীতে ট্রলারডুবিতে মারা যাওয়া আট জনই একে অপরের আত্মীয়। তাদের সবার বাড়ি জেলার সিরাজদিখানের লতব্দী ইউনিয়নের খিদিরপাড় গ্রামে। লাশ গ্রামে পৌঁছার পরই চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। রবিবার (৬ আগস্ট) দিনের বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে একই গোরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে, আট জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ধাক্কা দেওয়া বাল্কহেডের বাবুর্চিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মৃতরা হলেন— মোকসেদা বেগম (৪০), হ্যাপি আক্তার (২৮), পপি আক্তার (৩০), পপির দুই ছেলে সাকিবুল (১০) ও সজিবুল (৪), হুমায়রা (৫ মাস), ফারিয়ান (৮) ও রাকিবুল (১২)। তাদের সবার বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার লতাব্দি ইউনিয়নে।

জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টার দিকে লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকার তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের ওই ট্রলার ডুবে যায়। এতেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এখনও তিন জন নিখোঁজ রয়েছেন। আর উদ্ধার হওয়া লাশ রাতেই স্থানীয় প্রশাসন স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এদিকে, রবিবার সকাল ৯টার দিকে পপি ও তার দুই ছেলে সাকিবুল ও সজিবুলের জানাজা শেষে স্থানীয় খিদিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। দুপুর ২টার দিকে দাফন করা হয় পপির বোন হ্যাপি আক্তারকে। একে একে অন্যদেরও একই গোরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় আট জনের লাশ উদ্ধার পাশাপাশি ৩৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তুনার (৮), নাফা (৫) ও মাহিন (৪) নামের তিন শিশু এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ২২

রবিবার সকাল থেকে দুর্ঘটনারস্থল রসকাঠি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তালতলা-গৌরগঞ্জ খালের দুই পাড়ে ভিড় করেছেন উৎসুক জনতা। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী দল অভিযান পরিচালনা করছেন।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুর্ঘটনার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর ট্রলারটি তীরে টেনে তোলা হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান জানান, বৃষ্টি ও স্রোতের কারণে ট্রলারটি উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএ-এর সদস্যরা ট্রলারটি উদ্ধারে কাজ করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া স্থান থেকে ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রলারে কোনও লাশ পাওয়া যায়নি। সেখানে আটটি মোবাইল, দুটি ব্যাগ, একটি সোনার চেইন পাওয়া গেছে।

মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু ইউসুফ জানান, নিখোঁজ তিন জনের সন্ধানে তল্লাশি অব্যাহত থাকবে।

লৌহজং থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন জানান, এ ঘটনায় মারা যাওয়া পপির বড় ভাই রুবেল হোসেন বাদী হয়ে দুপুরে লৌহজং থানায় ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ নৌপুলিশের সিনিয়র এসপি হেলাল উদ্দিন বলেন, নিহতের স্বজন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এই ঘটনায় বাল্কহেডের বাবুর্চি আব্দুল সালামকে আটক করা হয়েছে।