বার্ষিক আয় ৮ কোটি হলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘরে নেই কোনও টিভি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় মানিকগঞ্জ-৩ (সদর-সাটুরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বছরে বিভিন্ন খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অথচ মন্ত্রীর নিজ বাসায় পরিবারের সদস্যদের দেশের খবরাখবর কিংবা বিনোদন দেখার জন্য নেই একটি টিভি! নেই রেফ্রিজারেটর কিংবা ইলেকট্রনিক কোনও সামগ্রী।

অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ও অবাস্তব মনে হলেও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এবারের জমা দেওয়া হলফনামা থেকেই এমন তথ্য জানা গেছে। তবে ২০০৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় তার ১ লাখ টাকা মূল্যমানের ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল।

হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, তিন মেয়াদে তার আয় বেড়েছে সাড়ে ১১ গুণের বেশি। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুণেরও বেশি। এবার তার হাতে নগদ ৬৪ লাখ, বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে ৬৭ হাজার ৯৯৬ দশমিক ৬২ ইউএস ডলার।

এদিকে ২০০৮ সালে তার ৩ নম্বর পার্ক রোড বারিধারা মডেল টাউন বাসা ও মানিকগঞ্জের গড়পাড়া বাসায় দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র উল্লেখ করলেও ২০১৮ ও ২০২৩ সালে সেটি কমে মাত্র ৭০ হাজার টাকা মুল্যমানের আসবাবপত্র আছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হলফনামা ঘেঁটে এই তথ্য পাওয়া গেছে।   

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুরস্কার হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর পদ লাভ করেন।

২০০৮ সালের হলফনামায় জাহিদ মালেক পেশা হিসেবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সানলাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লি. ও বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ারম্যান উল্লেখ করেছিলেন। ২০১৮ সালে পেশা হিসেবে প্রতিমন্ত্রী , স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছিলেন। বর্তমান ২০২৩-এর হলফনামায় পেশা হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। স্নাতকোত্তর পাস জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে দেশের আদালতে কিংবা থানায় কোনও মামলা নেই।

২০০৮ সাল এবং এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত এবং অন্যান্য বাবদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বার্ষিক আয় বর্তমানে ৮ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৫ টাকা। যা ২০০৮ সালে ছিল ৭১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯১ টাকা। এ হিসাবে গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ (১১ দশমিক ৬৩)।

হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ গুণ। এবার নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র, যানবাহন ও অন্যান্য বাবদ তার অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬১ টাকা। যা ২০০৮ সালে ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭ টাকা। এ হিসাবে গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য বেড়েছে ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৪ টাকা।

২০০৮ সালে জাহিদ মালেকের নামে অকৃষিজমি ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা এবং তার স্ত্রীর ছিল ২ দশমিক ৫ কাঠা। এ ছাড়া ৫৩ দশমিক ৪ শতক জমিতে ১১ তলা আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন এবং বাড়ি ছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। এ ছাড়া যৌথ মালিকানায় ৪০ বিঘা কৃষিজমি ছিল। এখনও সেই স্থাবর সম্পদের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে স্ত্রীর নামে ২ দশমিক ৫ কাঠার ওই জমি এবার নির্ভরশীলদের নামে স্থানান্তর করা হয়েছে। যৌথ মালিকানার ৪০ বিঘা কৃষিজমি এবার নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

হলফনামা অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রী শাবানা মালেকের সামান্য অস্থাবর সম্পদ কমেছে। ২০০৮ সালে হলফনামায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে ৩৯ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার বন্ড বা ঋণপত্র ছিল। ২০২৩ সালের হলফনামায় নেই বন্ড বা ঋণপত্র । তবে গত ১৫ বছরে তার ৫ ভরি স্বর্ণ বেড়ে ৫৫ ভরি হয়েছে। এই সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর স্ত্রীর প্রায় ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ কমেছে।

২০০৮ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীলদের ২৫ ভরি স্বর্ণ থাকার ঘোষণা থাকলেও এবারে তা উল্লেখ নেই। এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ও কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৯ টাকা দায় রয়েছে। ২০০৮ সালে সেই দায়ের পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ ৫৩ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ১ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৯ টাকা ঋণ বা দায় রয়েছে।