খরচের পাঁচ গুণ লাভ স্ট্রবেরি চাষে

বাংলাদেশে এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে বিদেশি ফল স্ট্রবেরি। ফলন, বাজার চাহিদা ও দাম ভালো হওয়ায় দেশের কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষকরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় স্ট্রবেরি চাষে সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। ফলে শেষ পর্যন্ত পাঁচ গুণেরও বেশি লাভ থাকছে হাতে।

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এবার স্ট্রবেরি চাষে সাড়া ফেলেছেন এ এলাকার চাষিরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা সরবরাহ করছেন। তাদের দেখে অনেক কৃষক স্ট্রবেরি চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা জানান, এ বছর এই উপজেলায় দেড় হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। শ্রীপুর পৌরসভার কেরয়া, বরমী ইউনিয়নের বরমা, গাড়ারন, গাজীপুর ইউনিয়নের নিজ মাওনা, গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছে।

খরচের তুলনায় পাঁচগুণ লাভ, তাই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ বাড়ছে

এই কর্মকর্তা বলেন, শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও এখন বাংলাদেশেও অনেক জায়গায় স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে। আকর্ষণীয় বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য স্ট্রবেরি অত্যন্ত সমাদৃত। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ বৃদ্ধিতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে এই ফল। অল্প পুঁজি, স্বল্প শ্রম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি। তাই এ ফল চাষে অল্প দিনেই সফলতার মুখ দেখেছেন এ উপজেলার অনেক কৃষক।

শ্রীপুর উপজেলা বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করতে হয়। এ জন্য পাওয়ার টিলার বা ট্রাক্টর দিয়ে ৫-৬ বার চাষ দিয়ে জমির মাটি ঝরঝরে করে নিতে হয়। তারপর সার, গোবর ও ক্যালসিয়ামের অন্য উপাদান ব্যবহার করে জমি প্রস্তুত করতে হয়। বিঘাপ্রতি স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।

ওই গ্রামের অপর কৃষক আশরাফুল জানান, মৌসুমের শুরুতে স্ট্রবেরির সাদা ফুল ফোটে। পরে হলুদ রঙের ফল ধরে। সবশেষে পাকা লাল টুকটুকে রং ধারণ করে। উইন্টারডন জাতের একটি চারা গাছ থেকে মৌসুমে কমপক্ষে দুই কেজি ফল পাওয়া যায়।

এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা

বরমী ইউনিয়নের বরমা গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে শুনে সাইফুল ইসলাম ভাইয়ের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে ছুটে এসেছি। বাগান দেখে ভালো লেগেছে। বাগান থেকে নিজ হাতে ছিড়ে স্ট্রবেরি খেয়েছি। বেশ ভালো স্বাদ। সাইফুল ভাইয়ের বাগান দেখে আমিও স্ট্রবেরি বাগান করবো বলে ভাবছি। স্ট্রবেরি চাষে বেশি খরচ হয় সেচ দিতে। এ পর্যন্ত ২৫-৩০ বার সেচ দিয়েছেন।

স্ট্রবেরির বাগান দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। তারা গাছ থেকে স্ট্রবেরি নিজ হাতে ছিড়ে খাচ্ছেন। অনেকেই এখন স্ট্রবেরির চাষ করার কথাও ভাবছেন।

স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন শ্রীপুরের গোদারচালা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ (২৮)। তিনি বলেন, টিস্যু কালচার ল্যাব থেকে মাদার গাছ কিনে চারা তৈরি করেছেন। এ চারা তিনি জমিতে রোপণ করেন এবং অন্যদের কাছেও চারা বিক্রি করে থাকেন। প্রথম তিনি মাদার গাছ ৪০ টাকা করে কেনেন। পরে মাদার গাছ থেকে যে চারা উৎপাদন হয় তা নিজের চাহিদা মেটানো পর কৃষকদের কাছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন।

শুধু ফল বিক্রি নয়, স্ট্রবেরি চারা বিক্রি করেও লাভ করছেন চাষিরা

তিনি দেড় বিঘা জমিতে সাড়ে ৪০০ স্ট্রবেরি গাছ লাগিয়েছেন। দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কেজি স্ট্রবেরি জমি থেকে তুলে থাকেন। প্রতি কেজি স্ট্রবেরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন।

তোফায়েল বলেন, আমার স্ট্রবেরি চাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক আগামী মৌসুমে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ক্ষেতের পাশেই টানানো সাইনবোর্ড ‘রেডগ্রিন স্ট্রবেরি ভিলেজ’। শীতের ফসল এই স্ট্রবেরির বর্তমান মৌসুম প্রায় শেষ। ক্ষেত পরিচর্যার পাশাপাশি অবশিষ্ট স্ট্রবেরি সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে। তোফায়েল জানান, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই স্ট্রবেরি সংগ্রহের কাজ শেষ করে চারা তৈরির কাজে মনোযোগ দেবেন।

ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গাছ থেকে স্ট্রবেরি আহরণ করার মৌসুম

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, স্ট্রবেরি পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। উচ্চ ফলনশীল স্ট্রবেরি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করার মাধ্যমে বেকারত্ব এবং পুষ্টি ঘাটতিও পূরণ করা সম্ভব। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়। অল্প বিনিয়োগে বেশি মুনাফা হওয়ায় এটি চাষে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি।