মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় নিহতদের ৭ জন এক পরিবারের

বিয়েবাড়ির আনন্দে মুহূর্তেই বিষাদের ছায়া

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের হলদিয়া বাজার এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে নিহত ৯ জনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে সাত জনই এক পরিবারের সদস্য। তারা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার মাহবুবুর রহমান সবুজের স্বজন। কনেপক্ষের অতিথি হিসেবে এক মাইক্রোবাসে ১৮ জন বরের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।

খালাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে উৎসবের কমতি ছিল না। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সাত সদস্যের মৃত্যুতে নিমেষেই সব ওলট-পালট হয়ে গেছে। খুশির বদলে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

নিহতরা হলেন—মাহবুবুর রহমানের মা ফরিদা বেগম (৫৫), ছোট ভাই সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি (৩০), সোহেলের শাশুড়ি রুমি বেগম (৫২), মামি মুন্নী বেগম (৪০), মুন্নীর দুই মেয়ে তাহিয়া (৭), তাসদিয়া (১১), আরেক মামি ফাতেমা বেগম (৪০)। এছাড়া আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া এলাকার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী জাকিয়া এবং মেয়ে রিদি (৫)। তারাও মাহবুবুর রহমানের আত্মীয়।

শনিবার (২২ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই পরিবারের বড় ছেলে ও দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া সাবেক সেনাসদস্য মাহবুবুর রহমান সবুজ। তিনি সাহাপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমান খানের ছেলে। সাত জনের মৃত্যুর খবরে তাদের বাড়িতে নেমেছে শোকের ছায়া। এলাকাবাসী বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন। কাঁদছেন আত্মীয়-স্বজনরা।

মাহবুবুর রহমানের বাড়িতে স্বজনদের ভিড়

মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‌‘আমতলীতে আমার খালাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে গত বুধবার বিকালে পরিবারের সদস্যরা তাদের বাড়িতে যাই। পরদিন বোনের বিয়ে ও গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয়েছিল। শনিবার বরের বাড়িতে কনেপক্ষের অতিথিদের যাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল। আমি ও আমার পরিবারের ১০ সদস্যসহ ১৮ জন আত্মীয়-স্বজন এক মাইক্রোবাসে বরের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। হলদিয়া বাজার এলাকায় সেতু ভেঙে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে যায়। আমরা কয়েকজন মাইক্রোবাস থেকে খালে ঝাঁপিয়ে পড়ি। বাকিরা নারী ও শিশু হওয়ায় বের হতে পারেনি। এতে আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেলো।’ 

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে সাত জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও সাত জন চিকিৎসাধীন আছেন। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

মাহবুবুর রহমানের বন্ধু মাসুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাত জনের লাশ নিয়ে সাহাপাড়া এলাকার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি আমরা। বাকি দুই ‍জনের লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। মাহবুব ও তার ছোট ভাই সুস্থ আছে। তারাও বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আহত বাকি সাত জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।’

মাহবুবুর রহমানের মামা দুলাল মাতুব্বর বলেন, ‘পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ। দুই পরিবারের ৯ সদস্য মারা গেছে। আমরা মাহবুবের বাড়িতে এসেছি। এখানে পরিবারের কেউ নেই। সবাই অনুষ্ঠানে গিয়েছিল।’

ভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, ‘খবর পেয়ে মাহবুবুর রহমানের বাড়িতে এসেছি। ৯ জনের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। ওই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৯ জনের মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন স্বজনরা। তাদের নিয়ে আসার পর জানাজা শেষে দাফন করা হবে।’ 

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। নিহতদের লাশ বাড়িতে আনা হচ্ছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ২টার দিকে হলদিয়া ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পার হওয়ার সময় সেতু ভেঙে খালে পড়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ৯ জনের লাশ উদ্ধার করে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। আহত অবস্থায় আরও ৯ জনকে উদ্ধার করা হয়।