ইউটিউব দেখে মাল্টা চাষে চমক, কোটি টাকা আয়ের আশা

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মতিউর রহমান। পাশাপাশি ইউটিউবে দেখে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। তিন একর জমিতে শুরু করেন চাষ। তিন বছরের মধ্যে মাল্টা চাষে সাফল্য এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পাঁচ শতাধিক গাছে ধরেছে বিপুল মাল্টা। গাছ থেকে পেড়ে এখন বাগানেই বিক্রি করছেন তিনি।

মতিউর রহমান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ডালেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা। তেলিহাটী ইউনিয়নের এমসি বাজার এলাকায় নোমান শিল্প গ্রুপের ইসমাইল টেক্সটাইলের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করছেন। তার বাগানের পাঁচ শতাধিক গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ মাল্টা। তার দাবি, এগুলো মিসরীয় জাতের। দেশে সবুজ মাল্টা থাকলেও হলুদ জাতের মাল্টা বাগান কেবল তারই।

এক কোটি ২৫ লাখ টাকা আয়ের আশা

এই কৃষি উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে মাল্টার বাগান করেন। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে এবার প্রথম ফলনেই বাগান করার ২৪ লাখ টাকা খরচ উঠিয়ে বাড়তি লাভ করছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ হাজার কেজি ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। এ থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। 

পাঁচ শতাধিক গাছে ধরেছে প্রচুর পরিমাণ মাল্টা

মতিউর রহমান জানিয়েছেন, তিন একরের কিছু বেশি জায়গাজুড়ে ৫০০টির বেশি মিসরীয় হলুদ জাতের  মাল্টা ও ৬০টি কমলার চারা রোপণ করেন। বর্তমানে গাছের বয়স সাড়ে তিন বছর। এ বছরই প্রথম ফলন হয়েছে। বাগান করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। প্রতি গাছে ২০ কেজি করে ফলন হয়েছে। হিসাবে ৫০০ গাছে ১০ হাজার কেজি মাল্টা হবে। প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ২৫০ টাকা দরে। এই হিসাবে প্রথম বছরই অন্তত ২৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন তিনি। আগামী বছর ফলন আরও বাড়বে, সে হিসাবে ৫০ হাজার কেজি ফলনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, নিজ হাতে মাল্টা ছিঁড়ে খাওয়ার স্বাদ নিতে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার বাগানে ভিড় করছেন। সানজিদা আক্তার নামে এক দর্শনার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফেসবুকে বাগানের ছবি দেখে ঘুরতে এসেছি। মাল্টাগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। নিজের হাতে গাছ থেকে ছিঁড়ে খাওয়ার আনন্দ অন্যরকম।’

স্থানীয় বাসিন্দা এমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের এখানে মাল্টার ফলন দেখে অবাক লাগছে। কারণ বাগান না করলে বোঝা যেতো না, এখানেও চাষ হয়। আরও বেশি উৎপাদন হলে রফতানি করা যাবে।’

কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান

বাগানের কর্মী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সারাদিন ক্রেতাদের ভিড় থাকে। ২৫০ টাকা কেজি দরে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এক লাখ টাকার বেশি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে।’

যেভাবে বাগানের শুরু

বাগান শুরুর কথা জানিয়ে মতিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার সময় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। তখন নিজে থেকে কিছু করার ভাবনা আসে। ইউটিউবে দেখে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হই। তখন ইউটিউবে দেখে জানতে পারি প্রতিদিন দেশে প্রায় ৬০০ টন মাল্টা লাগে। পুরোটাই আমাদনিনির্ভর। বর্তমান বাজারমূল্য ২০ কোটি টাকার। অথচ দেশে এর উৎপাদন নেই বললেই চলে। সেই থেকে বাগান করার পরিকল্পনা স্থির করি। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই তিন দিনে গাছের চারা রোপণ করি।’

নিজের এক একরের পাশাপাশি আরও দুই একর জমি বাগানের জন্য লিজ নিয়েছি জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, ‘বছরে ৪৯ হাজার টাকা লিজ নেওয়া জমিতে বাগান। ২০৩১ সাল পর্যন্ত লিজের মেয়াদ। চলতি বছর বাগান করার খরচ উঠে লাভ হবে। আশা করছি আগামী বছর, এক কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করতে পারবো।’

বাগানের পাঁচ শতাধিক গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ মাল্টা

বাংলাদেশে গত ১০ বছর ধরে মাল্টার চাষ হলেও প্রচলিত জাতটির কারণে কৃষকরা লাভবান হন না উল্লেখ করে এই কৃষি উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘তবে আমার বাগানের জাতটি মিসরীয় হলুদ মাল্টার। এই জাত চাষ করলে সফলতা আসবে চাষিদের। জানামতে, দেশে হলুদ মাল্টার সবচেয়ে বড় বাগান আমার।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে হলুদ মাল্টা চাষ হয় বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘শ্রীপুরে হলুদ মাল্টার চাষ প্রথম হয়েছে। এখানের মাটি চাষের উপযোগী। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা ওই চাষিকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন। আশা করছি, আরও কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হবে। বিদেশি এসব ফল দেশে উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। আমদানি কমবে।’