লামিয়া হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার ফিজা (২১) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে লামিয়ার বড় ভাই আরাফাত আল ফাহিম বলেন, ‘গত ২ জানুয়ারি লামিয়াকে তার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্না ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্মমভাবে হত্যা করে। এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য তারা লাশ ঘরের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যার সত্যতা পাওয়ায় থানায় মামলা করা হয়। এ ঘটনার পর আসামিরা সবাই পালিয়ে যায়। পুলিশ তাদের কাউকে ধরতে পারছে না। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’

লামিয়ার মা ফাহিমা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মুন্না, তার মা-বাবা ও বোনসহ স্বজনরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে আছে। এটা কেমন আইন। মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’

লামিয়ার বাবা ও মামলার বাদী মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে হত্যার পর ফতুল্লা থানায় আরও তিনটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেসব ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে মূল আসামিদের গ্রেফতার করেছে পুুলিশ। অথচ আমার মেয়ে হত্যার আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে প্রত্যেক দফতরে দফতরে গিয়ে কান্না করতে হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এই আসামিদের ছায়া দিয়ে রেয়েছে পুলিশ।’ 

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন লামিয়ার খালা সুরাইয়া আক্তার মুন্নি, মামা জাহাঙ্গীর আলম, এলাকাবাসী আলাল মাদবরসহ আরও অনেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসিনুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে লামিয়াকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি অর্থাৎ নিহতের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ পলাতক। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ 

পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না নিহতের স্বজনদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো ভিত্তিহীন কথা। মামলা হওয়ার পরে আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করবে না, তা হতে পারে না। তবে আসামিরা অনেক ধুরন্ধর প্রকৃতির। তারা এ ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না। কোনও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও অবস্থান করছে না। যার কারণে তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে কষ্ট হচ্ছে।’

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২ জানুয়ারি রাতে ফতুল্লার লামাপাড়া নয়ামাটি এলাকায় শ্বশুরবাড়ির জানালার গ্রিল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লামিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় তার স্বামী আসাদুজ্জামান মুন্নাসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই আত্মগোপনে ছিলেন। 

নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন, স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক জেনে প্রতিবাদ করায় লামিয়াকে হত্যা করা হয়। ৬ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে। ৭ জানুয়ারি লামিয়ার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।