উদ্ধার মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করতে বিস্ফোরণে কাঁপলো গোটা গ্রাম, অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এদিকে বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশেপাশের অর্ধশত বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ‘তীব্র শব্দে’ তিনটি গরু মারা যাওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন পুলিশ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হন।

খবর নিয়ে জানা যায়, মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করতে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকাল থেকে কাজ শুরু করে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। রাত পৌনে ৮টার দিকে মর্টার শেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল গ্রামটির অর্ধশত ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে সেলিম, হারেস, রশিদ, রফিজ, রেনু মিস্ত্রী, ফরিদ হোসেন ,আব্দুল হান্নান, মানিক মিয়া, জলিল, মুক্তার হোসেন,আব্দুল গাফফার, সেলিম মিয়া, বারেকের বাড়িসহ গ্রামটির অর্ধশত বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তীব্র শব্দ আশিক নামে এক কৃষকের তিনটি গরু মারা গেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মর্টার শেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটা বেশি ছিল প্রায় ৩০০ মিটার দূরের আমার দোকানের প্রায় সব কিছু উড়ে যায়। শুধু আমার নয়, আশপাশের অন্তত ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ ও বিল্ডিং-এ ফাটল ধরেছে। তীব্র শব্দে মারা গেছে গোয়ালে থাকা গরু-বাছুর।’

ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তানিয়া আক্তার বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ঠিক ৭টা ৫৬ মিনিটে আমরা তীব্র ঝাকুনি অনুভব করি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পড়ে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’

খুলে পড়েছে ঘরের টিন

এদিকে এই ঘটনার পর স্থানীয়দের জনরোষে পড়ে পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যমকর্মীদের স্থানীয় কয়েকজন শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার গজারিয়া উপজেলা প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম হোসেন জুয়েল বলেন, ‘মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটানোর পরে আশপাশের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এই ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর চড়াও হয়। কেন আমরা বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যদের মর্টার শেলটি দূরে কোথাও নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে বললাম না, সেজন্য তারা আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।’

এ বিষয়ে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘মর্টার শেলটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করার আশপাশের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে, সেনাবাহিনী সেখানে যাচ্ছে। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, বিস্তারিত পরে জানাবো।’

উল্লেখ্য, সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষি জমিতে মাটি কেটে আইল বানাতে গিয়ে একটি মর্টার শেল উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ জানায়, এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল।