ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা, দাফনের পর অভিযুক্ত তিন জনের বাড়িতে আগুন

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যুগিরসিট গ্রামে ধানক্ষেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়তে বাধা দেওয়া নিয়ে বিরোধে ছুরিকাঘাতে আহত নাজমুল হক (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শনিবার রাতে তাকে দাফন শেষে অভিযুক্তদের তিনটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত এলাকাবাসী।

শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাওরাইদ ইউনিয়নের যুগিরসিট গ্রামের গুজার মোড়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। নিহত নাজমুল হক ওই গ্রামের কৃষক মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সদরের ওয়েলডান অ্যাপারেলস লিমিটেডে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ধানক্ষেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়তে বাধা দেওয়ার জেরে একই গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে আল আমিন ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুল হককে আঘাত করেন। এ সময় নাজমুলের বাবা মোছলেম উদ্দিন এবং মা ফেরদৌসি খাতুনকেও পিটিয়ে আহত করেন আল আমিনের স্বজনরা। এ ঘটনায় নাজমুলের চাচা হাবিজ উদ্দিন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় চার জনকে আসামি করে মামলা করেন। অভিযুক্তরা হলেন স্বপন মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯), বাবুল মিয়ার ছেলে রাকিব (২৫), ফেরদৌস মিয়া (১৮) ও মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক মিয়া (৪০)। ঘটনার পর আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১ মে দুপুরে ধানক্ষেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পাশের ক্ষেতে ছাড়তে বাধা দেওয়া নিয়ে নাজমুলের সঙ্গে আল আমিনের কথা কাটাকাটি হয়। ওই দিন রাত ৯টার দিকে আল আমিন ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুলকে আহত করেন। তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ মে রাত ১০টার দিকে মৃত্যু হয়। শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় জানাজা ও দাফনের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আল আমিন ও তার দুই চাচা বাবুল মিয়া ও ওমর ফারুকের বাড়িতে আগুন দেয় এলাকাবাসী। আগুনে বসতঘরে থাকা সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

অভিযুক্ত ওমর ফারুক মিয়ার মা সায়মন নেছা বলেন, ‘শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নাজমুল মারা যায়। এ ঘটনায় আমার তিন সন্তানসহ নাতিদের আসামি করার খবর পেয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভয়ে আমি বাড়িতে তালাবদ্ধ করে চলে আসি। আমরা কয়েকজন নারী বাড়িতে এসে দেখি আমাদের তিনটি বাড়ির ঘরে থাকা সব মালামাল ও আসবাবাপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ছেলে আর নাতিরা খুন করলে তাদের বিচার হবে। কিন্তু আমাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দিল কেন?’

নিহতের চাচি শারমিন আক্তার বলেন, ‘নামজুলকে হত্যা করে মামলা থেকে বাঁচার জন্য আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা কেন আগুন দিতে যাবো।’

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুমিনুল কাদের বলেন, ‘আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি তিনটি বাড়ির সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাদী-বিবাদীরা একে অপরকে দোষারোপ করছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে জানিয়েছি। তারা তদন্ত করলে আসল ঘটনা জানতে পারবে।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নাজমুলকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার তদন্ত চলছে।’