মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটগামী ‘এমভি ব্ল্যাক বার্ড’ নামক একটি একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ নদীর ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে ৪ জন যাত্রী নদীতে পড়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কাচের অংশ ভাঙচুর এবং মাস্টার পলাশ মিয়াকে মারধর করে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, সকল যাত্রীকে উদ্ধার করে লঞ্চটি ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
লঞ্চঘাটে থাকা স্থানীয় কয়েকজন জানান, শুক্রবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে লঞ্চ ‘এমভি ব্ল্যাক বার্ড’। লঞ্চটি নদীর বেশিরভাগ অংশ পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটের বিপরীতে পানিতে তলিয়ে যাওয়া বালুর ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পিছনের অংশ ঘুরে যায়। এ সময় লঞ্চবোঝাই যাত্রীদের মধ্য থেকে অন্তত চার জন যাত্রী নদীতে ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় লঞ্চে থাকা যাত্রীদের ভেতর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কাচের অংশ ভাঙচুর করে এবং মাস্টারকে মারধর করে। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে নৌকা নিয়ে নদীতে পড়ে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে টেনে নৌকায় তোলে। প্রায় ৩০ মিনিট পর বিকল্প আরেকটি লঞ্চের সাহায্যে ডুবোচর থেকে উদ্ধারের পর লঞ্চটিকে ঘাটে নোঙর করা হয়।
লঞ্চ ঘাটে কর্তব্যরত আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, ‘দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটের সামনে থাকা বিশাল বালুর চর বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বর্ষার পানিতে তলিয়ে থাকা বালুর চরের সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগলে কয়েকজন নদীতে পড়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কাচের অংশ ভেঙে ফেলে মাস্টারকে মারধর করে।’
লঞ্চ থেকে নদীতে পড়ে যাওয়া যাত্রী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘লঞ্চটি ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে আসছিল। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে মাস্টার সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় আমার সঙ্গে থাকা তিন জন যাত্রী পদ্মা নদীতে পড়ে যায়। পরে একে একে তিন জনকে টেনে তোলা হয়। পরে আমি শুনেছি আরেকজনকে পরে টেনে তোলা হয়েছে। আমি এখন সুস্থ আছি।’
‘এমভি ব্ল্যাক বার্ড’-এর মাস্টার পলাশ মিয়া বলেন, ‘লঞ্চটি মাঝনদী পার হওয়ার পর প্রচুর স্রোতের কারণে পেছনের অংশ ঘুরে যাওয়ায় একটু কাত হয়ে পড়ে। পরে আমি শুনেছি চার জন যাত্রী পানিতে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ আমি লঞ্চটি আবার ঘুরিয়ে তাদের উদ্ধার করে ঘাটে নিয়ে আসি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের নৌসংরক্ষণ ও পরিচালনের সহকারী পরিচালক শেরে মস্তান বলেন, ‘আমি একটি প্রোগ্রামে ছিলাম। সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছি। তিন জন যাত্রী নদীতে পড়ে যাওয়ার সংবাদ পাই এবং তাদের উদ্ধার করা হয়। কোনও যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে এমন খবর পাইনি। নিখোঁজ থাকলে অন্যান্য যাত্রীদের কেউ বা তাঁর স্বজনরা অবগত করতেন বলে মনে করেন। এ ছাড়া মাস্টার কিছু বুঝে ওঠার আগেই ৬ নম্বর ঘাটের অদূরে থাকা ডুবোচরের সঙ্গে লঞ্চটির ধাক্কা লাগে। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত লঞ্চটি ঘাটেই নোঙর করে রাখা হবে ‘
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ওয়্যার হাউজ স্পিকার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ জন যাত্রী পদ্মা নদীতে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে চার জনকে উদ্ধার করেছি। এর মধ্যে বেশি অসুস্থ দুই জনকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন কিনা কেউ বলতে পারছে না। আমরা ডুবুরি দল নিয়ে ঘাটেই রয়েছি।’
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কিছু অংশ ভাঙচুর করে। এ ছাড়া চালককে মারধরের চেষ্টা করলে পুলিশ যাত্রীদের নিবৃত্ত করে। আমাদের হেফাজতে লঞ্চের চালক এবং সহকারী নিরাপদ আছেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন পর্যন্ত কোন যাত্রী নিখোঁজ নেই বলে জানতে পেরেছি।’