গণ-অভ্যুত্থানে নিহত রিয়ার মৃত্যুর ১১ মাস পর মামলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি বাড়ির ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু রিয়া গোপ (৬) নিহতের ১১ মাস পর হত্যা মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু রায়হান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তবে মামলার বিষয়টি বুধবার সকালে প্রকাশ পেয়েছে।

বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমেদ

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বছরের ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়া থেকে ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মিছিলকারীদের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তাদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হয় রিয়া। ওই সময় রিয়া নয়ামাটি এলাকার নিজ বাড়ির পাঁচতলার ছাদে খেলাধুলা করছিল। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ দিন পর গত বছরের ২৪ জুলাই মারা যায় রিয়া।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল রিয়া। দীপক স্থানীয় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই দুপুরের খাবারের পর ছাদে খেলাধুলা করছিল রিয়া। গোলাগুলির শব্দ শুনে ছাদের দিকে ছুটে যান রিয়ার বাবা দীপক। ছাদে গিয়ে মেয়েকে কোলে নিতেই একটি গুলি এসে রিয়ার মাথায় বিদ্ধ হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে অস্ত্রোপচারের ৫ দিন পর সে মারা যায়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ‘গান শট ইনজুরি’। তবে এ ঘটনার পর মামলা করতে রাজি হচ্ছিল না নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এ কারণে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে।

এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে রিয়া গোপ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকে নিহতের পরিবারকে অনেকবার মামলা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা মামলা করেনি। তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে। মামলায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে।’

এ বিষয়ে নিহত রিয়া গোপের বাবা দীপক কুমার গোপের নম্বরে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।