চলন্ত বাসে গণধর্ষণ : দুইজনের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর

Gang rape-1

চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় আটক তিনজনের মধ্যে দুইজনকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আটককৃতদের হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক লুনা ফেরদৌসের আদালত বাস চালক হাবিবুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৩) ও সুপারভাইজার রেজাউল করিম ওরফে জুয়েলের (৩৫) তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে হেলপার আব্দুল খালেক ওরফে ভুট্টু (৩০) ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ায় তাকে জেল হাজতে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অপর দিকে একই আদালতে ২২ ধারায় ধর্ষণের শিকার ওই নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

এর আগে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রেহানা পারভিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের চিকিৎসক দল শনিবার দুপুরে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা করেছেন।

চিকিৎসক রেহানা পারভীন জানান, পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।

শুক্রবার ভোরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলায় চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক নারী। বাসের ড্রাইভার, হেলপার ও সুপারভাইজার ওই নারীকে ধর্ষণ করে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।

ধর্ষণের শিকার ওই নারী জানান, বৃহস্পতিবার ধনবাড়ি উপজেলার দত্তবাড়ি গ্রামে তার এক আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যান।  শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে সেখান থেকে সফিপুর উপজেলার রাখালিয়াচাড়া এলাকার ভাড়া বাসায় ফেরার জন্য ধনবাড়ি বাসস্ট্যাণ্ডের বিনিময় পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। তখন বাসে আর কোনও যাত্রী ছিল না। বাসটি কিছুদূর যাওয়ার পর চালকের এক সহকারি তাকে ‘কুপ্রস্তাব’ দেয়। এ সময় বাসের আরও দুজন এগিয়ে এসে গামছা দিয়ে তার মুখ ও  ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে বাসের পেছনের সিটে নিয়ে তিনজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ রোডের দিকে দশ পনের মিনিট যাওয়ার পর রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে তাকে নামিয়ে দেয়। বাস থেকে নামার পরে ধর্ষিতা অন্য একজনের মোবাইল ফোন দিয়ে ঘটনাটি তার স্বামীকে জানায়। পরে তার স্বামী তাকে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

ঘটনার দিন দুপুরেই বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইল শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়ে যান ধর্ষকের স্বামী। সেখানে ধর্ষকরা সবাই উপস্থিত ছিল। এ ঘটনায় পরিবহন ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা বিষয়টি আপোষরফা করার আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

ধর্ষিতার স্বামীর অভিযোগ করে বলেন, শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ঘটনাটি মীমাংসার জন্য আমাকে এক লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে থানায় মামলা করেছি। আমি শুক্রবার মধ্যরাতে বাসের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারসহ ছয় শ্রমিক নেতাকে অভিযুক্ত করে ধনবাড়ী থানায় মামলা করেছি।

পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে বাস চালক হাবিবুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৩), সুপারভাইজার রেজাউল করিম ওরফে জুয়েল (৩৫) ও হেলপার আব্দুল খালেক ওরফে ভুট্টুকে (৩০) গ্রেফতার করেছে।

টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু জানান, শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে নতুন বাস টার্মিনালে সমিতির এক সভায় হাবিবুর রহমান নয়ন, আবদুল খালেক ভুট্টু ও রেজাউল করিম জুয়েলকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তিনজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশের একটি দল ঘটনা তদন্ত করছে। এর সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

/জেবি/