কুয়েটে শিবিরকে সক্রিয় করতে গোপনে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সক্রিয় করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তারা  শিবিরকে আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ দিয়ে আস্তানা গড়ে তুলতে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খানাজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম  জানান, ‘গত সপ্তাহে (১ মে) রাতে কুয়েট রোড এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে চার শিবির কর্মীকে আটক করা হয়। এরা সবাই কুয়েটের শিক্ষার্থী। এছাড়া ২ মে কুয়েটের বিভিন্ন হল ও মেস থেকে আরও ১৪ শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বই-পুস্তক, রেজিস্ট্রার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত রেজিস্ট্রারে শিবিরকে যারা নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দেয় তাদের নামের তালিকা রয়েছে। কুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নাম রয়েছে সেখানে।’

তিনি আরও জানান, ‘গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা আগে ছাত্রশিবির করতো বলে জানিয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন বই ও ল্যাপটপ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। কুয়েটের সহযোগিতা পেলে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’

আটককৃতদের হেফাজত থেকে উদ্ধারকৃত রেজিস্ট্রার তালিকা থেকে জানা গেছে, শিবিরকে সহায়তাকারী কুয়েটের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জায়েদুর রহমান, মানবিক বিভাগের (ইংরেজি) সহকারী অধ্যাপক মুন্সী তৌহিদুজ্জামান, কর্মকর্তাদের মধ্যে সেকশন অফিসার (পরীক্ষা শাখা) মশিউর রহমান, সেকশন অফিসার (শিক্ষা শাখা) শেখ আলাউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবু হায়াত, কর্মচারীদের মধ্যে ইউআরপি বিভাগের মনিরুল ইসলাম, প্রকৌশল শাখার আব্দুল ওহাব, আইইএম বিভাগের ফারুখ হোসেন, উড শপের ওয়াহিদুজ্জামান, প্রশাসনিক ভবনের পরিচালক (গওস) অফিসের মো. এমদাদুল, সিএসই বিভাগের সাইফুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম বেল্লাল, রেজিস্ট্রার অফিসের আ ন ম রেজওয়ানুর রহমান নাঈম ও পিএটু রেজিস্ট্রার আসাদুল হক, লাইব্রেরির তরিকুল ইসলাম। এছাড়া কুয়েটের ভেতরে অবস্থিত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কর্মী মিঠু ও কুয়েট রোডে বাকি বিল্লাহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিকসহ অনেকের নাম শিবিরের শুভাকাঙ্ক্ষিদের তালিকায় রয়েছে। তারা নিয়মিত অর্থ সহায়তা, স্থান ও পরামর্শ প্রদান করেন। কুয়েটের রেজিস্ট্রার জিএম শহিদুল আলম  এ তালিকায় থাকা নামগুলো নিশ্চিত করেছেন।কুয়েটের গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীরা

কুয়েটের রেজিস্ট্রার জিএম শহিদুল আলম এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা নিয়মিত মাসিক চাঁদা দেন। এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জায়েদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য টাকা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিভিন্ন সময় ছাত্ররা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সহযোগিতা চেয়ে থাকে। তাদের শিক্ষকরা সহযোগিতাও করে থাকেন। এটাকে যদি কেউ শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সহযোগিতা বলে থাকেন তাহলে কি বলার আছে!’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েটের ছাত্র-ছাত্রীরা এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং কুয়েটের ভিসির কাছে তাদের দাবির কথা ব্যক্ত করেন। কুয়েটের ভিসি ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে শিবিরকে মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কার্যত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও মনে করা হচ্ছে।

/বিএল/এফএস/

আরও পড়ুন- 

পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সংস্কারে সুফল দেখছেন শিক্ষাবিদরা