বিবাহিতদের দখলেই থাকলো সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ!


বিবাহিতদের দখলে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগকেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামের পরও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের অধিকাংশ বিবাহিত নিজ নিজ পদ অনড় আছেন। পদত্যাগ করেছেন মাত্র একজন নেতা। জানা গেছে, বিবাহিত ছাড়াও মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটিতে রয়েছে অছাত্র ও ব্যবসায়ীরাও। এ নিয়ে ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বরে এস এম মারুফ তানভীর হুসাইন সুজনকে সভাপতি ও এহসান হাবীব অয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্যের একটি আংশিক কমিটির  অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালিন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকি নাজমুল আলম। ১ বছর পরে ১৫১ সদস্যের এক বছর মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছরের সেই কমিটি বর্তমানে সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময় পার করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা কর্মী জানান, বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন সুজন বিয়ে করেছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নানের মেয়েকে। এছাড়া  ভোমরা স্থলবন্দরে মেসার্স জেবা এন্টারপ্রাইজ নামের ভোমরা কাস্টমস সিএন্ডএফ এর এজেন্ট ব্যবসা রয়েছে তার। দলীয় কাজ বাদ দিয়ে ব্যবসা নিয়েই তিনি ব্যস্ত সময় পার করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলার সভাপতিই বিবাহিত। সাড়ে চার বছর ধরে চলা ‘এক বছর’ মেয়াদী এই কমিটির অনেকেরই ছাত্রজীবন ইতোমধ্যেই শেষ। বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন, সহ-সভাপতি নাছিম হায়দার রিপন, সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান, সাইফুল আযম জিমি, মারুফ হাসান রিঙ্কু, খন্দকার আওরঙ্গজেব নয়ন, সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের রাজু, তালা উপজেলা  ছাত্রলীগের সভাপতি সরদার মশিয়ার। আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ, সাধারণ সম্পাদক আবু নাজিরসহ আরও অনেক নেতা বর্তমানে বিবাহিত জীবনযাপন করছেন।

তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সরদার মশিয়ার বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করবো।’ দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মোবাইল ফোনে বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাছিম হায়দার রিপনের কাছে বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও কল রিসিভ করেননি।

জেলা  ছাত্রলীগের  সহ-সভাপতি  জাহিদ  হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা শুনে আমি নিজেই পদত্যাগ করেছি।’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবীব অয়নের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ  করলে একবার রিসিভ করে বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি।’  পরে একাধিকবার তার ব্যবহৃত  নাম্বারে ফোন করলেও তিনি আর রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জেলা কমিটির সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি।  কেন্দ্রীয় কমিটির আল্টিমেটাম এর পর   অনেকে পদত্যাগ করেছে।যারা বিবাহিত তাদের আমি পদত্যাগ করতে বলেছি।  প্রমাণসহ বিবাহিতদের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তার নিজের বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি বিবাহিত কিনা আপনারা তদন্ত করে দেখতে পারেন।’

ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তাদের আল্টিমেটাম ও মৌখিক নির্দেশ দিয়েছি। যারা এগুলো শুনবে না,  তাদের ক্ষেত্রে শিগগিরই জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।’

/এসএসএ/এফএস/ 

আরও পড়ুন- সিলেটে জেল সুপারের বিদায়ী অনুষ্ঠানে অতিথি রাগীব আলী!