‘আমার জীবন নিয়ে দুই মানিককে কেন বাঁচিয়ে রাখলে না’

নিহত ৬ জনের মরদেহ৩ বছরের মেয়ে মিম আর তার ভাই ১২ বছরের আশিকুজ্জামানের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ আগেও যারা কোলে বসে খেলছিল, তাদের মরদেহের সামনে মা রোজিনা আক্তার কিছুতেই কান্না থামিয়ে রাখতে পারছে না। একটু পর পর বিলাপ করে উঠছেন। বলছেন,  ‘ওই বাড়িতে কী করে ফিরবো? আমার দুই কোলের মানিককে রাস্তায় হারালাম। শ্বাশুড়িকেও বাড়িতে নিয়ে যেতে পারলাম না। আল্লাহ, তুমি আমার জীবন নিয়ে আমার কোলের দুই মানিককে কেন বাঁচিয়ে রাখলে না?’

খুলনার বসুপাড়ায় স্বজনের দাফন শেষে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে নিজেদের বাড়িতে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয় জন নিহত হওয়ার পরের চিত্র এমনই। তিনটি ফুটফুটে শিশুসহ ছয় জনের লাশ সারিবদ্ধভাবে জড়ো করে রাখা। পাশেই বসে রয়েছেন স্বজনরা। তাদের কারও চোখে অশ্রু, কেউ শোকে স্তব্ধ। কেউ বিলাপ করছেন প্রিয়জনদের হারিয়ে, কারও মুখে রা সরছে না।

ছেলে আশিকুজ্জামান ও মেয়ে মিমকে হারিয়ে মা রোজিনার আহজারিমঙ্গলবার (২০ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাটকেল ঘাটার ভৈরব নগর এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সাপ্তাহিক জনভেরি পত্রিকার সম্পাদক খুলনার বসুপাড়ার এ টি এম এলাহি বক্স সোমবার (১৯ মার্চ) ইন্তেকাল করেন। তার জানাজা ও দাফনে যোগ দিতেই সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থেকে একটি পিকআপে চড়ে খুলনার পথে রওনা হন এলাহী বক্সের আত্মীয়রা। খুলনা থেকে ফেরার পথে ওই পিকআপের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষে প্রাণ হারান পিকআপে থাকা ১৬ জনের মধ্যে ছয় জন।

এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাইদুল। স্বামীকে চোখের সামনে প্রাণ হারাতে দেখে সাইদুলের স্ত্রী ওবিয়া খাতুন যেন পাথর হয়ে গেছেন। চোখে পানি পর্যন্ত নেই। একই ঘটনায় স্ত্রী নূর বানুকে হারানো মোহম্মদ আলী নিজেই আহত হয়ে চিকিৎসাধীন খুলনার হাসপাতালে। একই পরিবারের ছয় জনের মৃত্যু বাকি সবাইকেই শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। প্রত্যেকেই হারিয়েছেন স্বজনকে। কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন!

দুর্ঘটনায় আহত মোহম্মদ আলী (৭০)দুর্ঘটনায় আহত মোহম্মদ আলী জানান, সাপ্তাহিক জনভেরি পত্রিকার সম্পাদক এ টি এম এলাহি বক্স ছিলেন তাদের আত্মীয়।  তার জানাজা ও দাফনে অংশ নিতেই পিকআপ ভাড়া করে রওনা দিয়েছিলেন খুলনার পথে। ফেরার পথে ভৈরব নগর এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। ছয় জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি তিনিসহ চার জন আহতও হয়েছেন।

সাতক্ষীরা পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লাশগুলো উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদেরও একই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মেদ  বলেন, নিহতদের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। বুধবার স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. ইফতেখার হোসেনসহ প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন জেলা প্রশাসকসহ অন্যরা।