সুন্দরবনের কাছে ডুবে যাওয়া কার্গো উদ্ধার শুরু হয়নি তিন দিনেও

পশুর নদীতে কার্গো ডুবিসুন্দরবনের কাছে মোংলা বন্দর চ্যানেলের পশুর নদীর হারবাড়িয়া এলাকায় ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজ উদ্ধারের কাজ শুরু হয়নি তিন দিনেও। মঙ্গলবার জাহাজটি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরুর কথা বলেছিল মালিক পক্ষ। তবে মোংলা বন্দর ও বন বিভাগকে দেওয়া সে কথা তারা রাখেননি। এমনকি তারা সুন্দরবন বিভাগের কাছে ওই জাহাজের কোনও কাগজপত্রও সরবরাহ করেননি। ফলে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভগের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনও জমা দিতে পারেননি।

তবে মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার অলিউল্লাহ জানান, ওই কার্গো জাহাজটির ইনসুরেন্সের কারণে আজ মঙ্গলবারও উত্তোলনের কাজ শুরু করেনি মালিক পক্ষ। ইনস্যুরেন্সের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে সরেজমিনে দেখে যাওয়ার পর এটির উত্তোলনের কাজ শুরু করা হতে পারে।

ডুবে থাকা জাহাজটির মালিক ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক সংঘের সভাপতি মো. দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি ঘটনা ঘটলে তার আনুসঙ্গিক কাজ করতে কিছু সময় লাগতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক করা হচ্ছে। আগামীকাল  বুধবার জাহাজটি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

কার্গো জাহাজের চালক মো. আমির হোসেন জানান, ডুবন্ত কার্গো জাহাজের ফিটনেস ও ধারণ ক্ষমতা সার্টিফিকেট, ইনস্যুরেন্সের কাগজপত্রসহ উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত নৌযান এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহে দেরি হওয়াতেই মূলত মালিকপক্ষ কাজ শুরু করতে পারছে না।

মালিকপক্ষ ডুবন্ত জাহাজটি উদ্ধারের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাত দিনের সময় নিয়েছে। তবে কোনও কাজ ছাড়াই দুই দিন পার হয়ে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া ১৫ দিনের মধ্যেও কার্গো জাহাজটি আদৌ উদ্ধার করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ এর আগে বন্দর চ্যানেলে যে সব নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটেছিল তাতে সময় লেগেছিল কোনোটির মাসের অধিক, আবার কোনোটির কয়েক মাস।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালেও ডুবন্ত কার্গো জাহাজটি উদ্ধার কাজ শুরুর কথা বলেছে মালিক পক্ষ।  তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত  তা শুরু করতে পারেনি তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্গোটি উত্তোলনের জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। উদ্ধারের নামে সময়ক্ষেপণ করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডুবন্ত জাহাজটির মালিক পক্ষ এই পর্যন্ত বনবিভাগকে কোনও কাগজপত্র সরবরাহ করেনি। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজের জন্য আজ চিঠি লিখেছি।’

সুন্দরবনের হারবাড়িয়া এলাকার ৬ নম্বর অ্যাংকোরেজে থাকা লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি অভজারভার’ ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে আসে। জাহাজটি থেকে রবিবার (১৫ এপিল) ভোরে কয়লা নেওয়া হয় ঢাকার ইস্টার্ন ক্যারিয়ার নেভিগেশনের মো. সোহেল আহম্মদের ‘এমভি বিলাস’ কার্গো জাহাজে। খুলনার দুলাল এন্টারপ্রাইজের জন্য ইট ভাটা ও সিরামিক কারখানাগুলোর জন্য আমদানি করা কয়লা নিয়ে তা রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দেয়। কিছু দূর এগোলেই ডুবোচরে ধাক্কা লেগে তলা ফেটে এটি ডুবে যায়। এ সময় কার্গোতে থাকা সাত কর্মচারী সাঁতরে তীরে উঠে আসেন।

সুন্দরবনের মধ্যে পশুর নদীতে লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা নিরূপণ করতে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বনবিভাগ।

অপরদিকে রবিবার দুপুরে কয়লার মালিকপক্ষে চট্রগ্রামের সাহারা এন্টারপ্রাইজের অপারেশন ম্যানেজার লালন হাওলাদার মোংলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে তিনি দাবি করেছেন, দুর্ঘটনায় কোম্পানির ১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে ডুবে যাওয়া লাইটার কার্গোর মাস্টার ফরিদ মিয়া দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করে মোংলা থানায় অপর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী।