কমরেড অমল সেনের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরে স্মরণমেলা

উপমহাদেশের বাম আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, তেভাগা আন্দোলনের সংগঠক কমরেড অমল সেনের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ১৭ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে ওইদিন ও তার পরেরদিন ১৮ জানুয়ারি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাকড়িতে অমল সেন স্মরণমেলা আয়োজনের কথা জানিয়েছে জেলা ওয়ার্কার্স পার্টি। স্মরণমেলার প্রথমদিন বাকড়ি বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিতব্য স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করবেন অমল সেন স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি ইকবাল কবির জাহিদ। অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, পলিট ব্যুরো সদস্য মাহমাদুল হাসান মানিক, অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, কামরুল আহসান, নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি শেখ হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অনিল বিশ্বাস, স্মৃতি রক্ষা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিপুল বিশ্বাসসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। দুইদিনের কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে, ১৭ জানুয়ারি দুপুর দুইটায় অমল সেন স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, সন্ধ্যা ছয়টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ১৮ জানুয়ারি দুপুর দুইটায় চিত্রাঙ্কন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।Untitled-1

অমল সেন ১৯ জুলাই ১৯১৩ সালে বৃটিশ ভারতের তৎকালীন যশোর জেলার নড়াইল মহকুমার আফরা গ্রামের এক সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে যুক্ত হয়ে তিনি ‘অনুশীলন’ সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৩৩ সালে খুলনার বিএল কলেজে রসায়নশাস্ত্রে পড়া অবস্থায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৩৩ সালে এই অঞ্চলের জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার বাবা-কাকাদের জমিদারির বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি এলাকার গরিব কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন তিনি। ১৯৪৬ সালের ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘বাসুদা।’

অমল সেন ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টির যশোর জেলা কমিটির সম্পাদক নিযুক্ত হন। সে সময় তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগ সরকারের রোষানলে পড়েন এবং ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন। দুই বছর জেলের বাইরে থেকে আবার ১৯৫৮ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৯ পর্যন্ত বন্দি থাকেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় মুক্তি লাভ করলেও আবারও তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে কমিউনিস্ট নেতা আব্দুস সবুরের নেতৃত্বে জনগণ যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে অমল সেনসহ অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মুক্ত করে।

অকৃতদার, নিঃস্বার্থ বিপ্লবী কমরেড অমল সেন মুক্তিযুদ্ধকালে জেলমুক্ত হয়ে ভারতে চলে যান এবং তখন ‘বিভ্রান্ত বাম কর্মীদের’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করতে ‘খোলা চিঠি’ লিখে আহ্বান জানান। গড়ে তোলেন ‘বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটি’। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে চীন-মস্কো পন্থার বিপরীতে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলেন এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কমরেড অমল সেনের হাতে গড়া লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি পরে নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি নাম ধারণ করে। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করেছেন।

আজীবন সংগ্রামী কমরেড অমল সেন ২০০৩ সালে ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজনৈতিক জীবনে কমরেড অমল সেন বাম-ডান বিচ্যুতির বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট কর্মীদের সমাজ বিপ্লবের দিশা দেখিয়েছেন তার ‘জনগণের বিকল্প শক্তি’ নামের চিন্তাসূত্র দিয়ে। কমিউনিস্ট পার্টি এবং জীবনবোধের অনুশীলনে ‘কমিউনিস্ট জীবন ও আচরণ রীতি প্রসঙ্গে’ বইটি এদেশের কমিউনিস্টদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।