জাতীয় নির্বাচনে ভুল ফল প্রকাশের অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় ঢাকা ট্রিবিউন ও বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা প্রতিনিধি মো. হেদায়েৎ হোসেন মোল্লাকে। গ্রেফতার হওয়ার দু’দিন পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এ মামলার অপর আসামি দৈনিক মানবজমিনের খুলনা প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলাম বর্তমানে জামিনে আছেন। কিন্তু আট মাস পার হলেও মামলটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ। অথচ ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেও পাস হওয়া এ আইনের বিধান মতে, অতিরিক্ত ৩০ দিন সময় নিলেও সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
আর গত ৯ আগস্ট ফেসবুকে মানহানিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে খুলনা সদর থানায় ডিজিটাল আইনে মামলা করেন খুলনা প্রেস ক্লাব সভাপতি এসএম হাবিব। ওই মামলায় ২২ আগস্ট শাহীন রহমান (৪২) নামে এক সাংবাদিক গ্রেফতার হন। এ মামলায় তার নামে চার্জশিট প্রস্তুত হয়েছে। একই ঘটনায় শাহীন রহমানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেন এক নারী। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট তেরখাদায় একই আইনে তার বিরুদ্ধে তৃতীয় মামলাটি দায়ের হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে সংসদে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল ২০১৮ পাস হয়। এর আগে ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর ৯ এপ্রিল তা সংসদে উত্থাপন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগেরমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়, যদি কোনও ব্যক্তি ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কোনও তথ্য প্রকাশ করে যা আক্রমণাত্মক,ভীতি প্রদর্শক বা কাউকে নীতি ভ্রষ্ট করে বা বিরক্ত করে; অপমান অপদস্ত বা হেয় করে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা বিভ্রান্ত করতে কোনও তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত করে প্রকাশ বা প্রচার করে তবে তা অপরাধ হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা,খুলনার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন,‘আইনের ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে। কিন্তু গত এক বছরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে। যতগুলো মামলা হয়েছে তার প্রায় সবই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। আইনের অপপ্রয়োগের কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই আইনের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মত প্রকাশের অন্যতম হাতিয়ার গণমাধ্যম আইনের বাধ্যবাধকতায় আটকে গেছে। আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন করা দরকার।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের নতুন রূপই হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সাধারণভাবে আইনটা পড়লে ভালোই মনে হয়। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা সেটাই বড় ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত এক বছরে খুলনায় আইনের অপপ্রয়োগের ফলে সাংবাদিকদের মুক্ত স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পথ সংকুচিত হয়েছে।’