জমি না পেয়ে দেয়াল তুলে রাস্তা বন্ধ করলো স্কুল কর্তৃপক্ষ!

ডান পাশে স্কুল এবং বাম পাশে বাজারের রাস্তায় দেয়াল তোলা হয়েছেযশোরের খাজুরা বাজারে পাশের রাস্তায় দেয়াল তুলে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে,  স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা জহর আলী লস্করের বিল্ডিং ভেঙে স্কুলের জন্য জমি চেয়েছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দুই মাস আগে দেয়াল তুলে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের দাবি, ওই জমি স্কুল কর্তৃপক্ষের।

বিষয়টি সুরাহার জন্য মুক্তিযোদ্ধা জহর আলীসহ বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দেয়াল অপসারণ করতে যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারের ওই রাস্তার দু’পাশে ১৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই রাস্তাটি প্রধান সড়কে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। গত ৮০-৯০ বছর ধরে স্থানীয়রা ওই রাস্তাটি দিয়ে প্রধান সড়কে যাতায়াত করতো।

খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন বলেন,  প্রায় দু’মাস হলো ইট গেঁথে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এখন লোকজনের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ঘোরাপথে অনেকেই আসতে চাইছেন না।

বাজারের ওই রাস্তার পাশে টেইলার্সের দোকান রয়েছে মোতালেব সরদারের। তিনি বলেন, ‘চারদিন পর আজ দোকান খুলেছি। আগে মোটামুটি লোকজন আসতো, টুকটাক কাজ হতো। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন লোকজনের আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই বছর ছোট্ট এই দোকানের আয় দিয়েই সংসার চালাতাম। এখন অর্ডার প্রায় বন্ধ। সে কারণে মাঝে মধ্যে আসি। খুবই কষ্টের ভেতরে আছি।’

জহর আলীর একতলা ভবনের একটি রুম একটি বেসরকারি ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা ভাড়া নেয়। দু’মাস ধরে রাস্তা বন্ধ থাকায় তারা ঘর ছেড়ে দিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক শুকুর আলী বলেন, ‘আমাদের অফিসে সবসময় লোকজন আসে। কর্মীদের মোটরসাইকেল আছে। দেয়াল তুলে দেওয়ায় লোকজন যেমন আসতে পারছে না, তেমনি মোটরসাইকেল রাখারও ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই আমরা এই জায়গা ছেড়েছি।’

বাজারের রাস্তায় তুলে দেওয়া দেয়ালজহর আলী বলেন, ‘বাজারে ১০ শতক জমির পরে আমার একতলা বাড়ি এবং ৮টি দোকান ভাড়া দেওয়া রয়েছে। স্কুলের জন্য পূর্ব-পশ্চিমে বিল্ডিংয়ের অংশ ভেঙে শিক্ষকরা জমি চাইছেন। না দেওয়ায় রাস্তার উভয়পাশে তারা ইট দিয়ে গেঁথে তা আটকে দিয়েছেন।’

তিনি জানান, বিষয়টির সুরাহা করতে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছি। এসিল্যান্ড কাগজপত্র চেয়েছিলেন, আমরা দিয়ে এসেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘জমিটি স্কুলের। তাছাড়া দোকানে বসে থাকা লোকজন স্কুলের মেয়েদের টিজ করে। সেকারণে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্কুলের অবয়ব বাড়াতে জহর আলী সাহেবের কাছে আমরা জমি চেয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম ৫০ লাখ টাকা নিয়ে জমিটি আমাদের যেন দিয়ে দেন। তিনি দেননি। রাস্তার জায়গা স্কুলের, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র এসিল্যান্ডকে দেওয়া হয়েছে।’

বাজারের রাস্তায় তুলে দেওয়া দেয়াল

বন্দবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, ‘বিষয়টি ইউএনওকে বলেছি। সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে যদি দেখা যায় রাস্তার জায়গা স্কুলের, তবে ভবন ভেঙে দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানিয়া আফরোজ বলেন, ‘জমির মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তে এসিল্যান্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দু-এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সুফিয়ান  বলেন, ‘সামনের সপ্তাহে আমরা দু’পক্ষকেই ডাকবো। সার্ভেয়ার পাঠানো হবে জমি পরিমাপের জন্য। তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’