যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল রশিদ বলেন, ‘এই উদ্যোগ বিদ্যুৎ-জ্বালানি মুক্ত ও পানি সাশ্রয়ী। ঝিকরগাছা অঞ্চলের কৃষকেরা এর সুফল পেয়েছেন, তারা সানন্দে এটি গ্রহণ করেছেন। এই কর্মসূচির সফলতায় দেশের ২৬টি উপজেলায় যেখানে বারোমাসি ফুল ও সবজি চাষ করা হয়, সেখানে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করা যায়।’
ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের শাহজাহান কবীর চাষাবাদের জন্য ডাগওয়েল ও শেড (পলি হাউজ) দুটোই গ্রহণ করেছেন, চাষ করছেন জারবেরা। তিনি বলেন, ‘এই প্রযুক্তি আসার পরই গ্রহণ করি। ডাগওয়েল বা পাতকুয়া থেকে সৌরচালিত পাম্পের মাধ্যমে তোলা হয় পানি। আর বর্ষামৌসুমে বৃষ্টির পানি উপরে থাকা চোঙার মাধ্যমে কুয়ায় নেমে আসে। সেখান থেকে সরবরাহ লাইনের (পাইপ) মাধ্যমে পানি চলে যায় সোজা ফুল ও সবজিক্ষেতে। ফুল ও সবজিগাছের গোড়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে পানি।’
বিএডিসির এই কর্মসূচির প্রথম গ্রাহক ফুল ও সবজিচাষি ইসমাইল হোসেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ফুল ও সবজি চাষ করছেন। ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমার ২৪ বিঘার মধ্যে ১২ বিঘা ড্রিপ ইরিগেশনের আওতায়। প্রথমে অল্প পরিসরে কাজ শুরু করেছিলাম। বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম সরেজমিনে এসে চাষাবাদের সফলতা দেখে যান। পরে এই কর্মসূচি বিস্তৃত হয়।’
ইসমাইল হোসেন জানান, ‘পলি হাউজের উপরের দিকে রয়েছে ফগার মেশিন। সেখান থেকে কুয়াশার মতো করে পানি বের হয়। পলি হাউজের পলিথিন ওঠানামা করিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। সেই কারণে কীটনাশকের ব্যবহার করা লাগে না।’
ফুলচাষি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘বোঁটা লম্বা চায়না রোজের প্রথম জাত আমি ঝিকরগাছায় আনি। এই জাতের গোলাপ বেশ সেনসিটিভ, পরিমিত সেচ ও নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা না হলে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আমি ড্রিপ ইরিগেশনের এই পদ্ধতির জন্য আবেদন করেছি। না পেলে নিজ উদ্যোগেই সেটি করতে হবে।’
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, ঢালাও সেচে পানির অপচয় হয়। এই কর্মসূচিতে চাষি উপকৃত হচ্ছেন। ফুল ও সবজি চাষে খরচ এবং ঝুঁকিও কমছে। এটি কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। যশোরের ৭৫টি গ্রামে ফুলচাষ হয়। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এই কর্মসূচির আওতায় আনতে সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।