জানা যায়, ঝড়ের তাণ্ডবে শার্শায় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০ একর সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে তোলার মতো আম ও লিচুর বেশির ভাগই ঝরে পড়েছে। ছোট-বড় অনেক গাছ উপড়ে ও ডালপালা ভেঙে অনেক জায়গায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খুঁটি ভেঙে ও লাইনের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অচল হয়ে আছে। খুঁটি ও লাইন মেরামত শেষ না হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ঝড়ে মত্যু হয়েছে চার জনের। তারা হলেন—উপজেলার শার্শা গ্রামের জেলেপাড়ার মৃত সুনীল মণ্ডলের ছেলে গোপাল বিশ্বাস (৬৫), জামতলা এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫), গোগা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার শাহাজানের স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০) এবং মহিষাকুড়া গ্রামের মোবারকের ছেলে মিজানুর রহমান (৪০)।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আম্পানের তাণ্ডবে লেবু , ড্রাগন, পেয়ারা, পেঁপে বাগানসহ শাক-সবজি ক্ষেত মাটিতে মিশে গেছে। বেনাপোল বাজার এলাকায় সড়কের পাশে বড় বড় গাছ পড়ে রয়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও পৌরসভার আধুনিক ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে সড়কের ওপর পড়ে আছে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় টিনের ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। গাছ পড়ে ভেঙে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি।
বেনাপোল, ছোটআঁচড়া মাঠ, পুটখালী মাঠ, চাতুরিয়ার বিলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সবজি চাষিদের। এ এলাকায় বড় বড় আম বাগান রয়েছে। প্রতি বছর এখান থেকে বিদেশে রফতানি হয় আম। এসব আম বাগানে কাঁচা আম পড়ে সয়লাব হয়েছে। চাষিরা কাঁচা আম নিয়ে বাজারে পাঁচ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন।
একই কথা বলেন আম চাষি হায়দার ও জিয়া। তাদের বাগানের সব আম ঝরে পড়ে গেছে। কাঁচা আম বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
বেনাপোল কাস্টমস হাউস, বিজিবি ক্যাম্প ও বন্দরের শেডগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বেনাপোল পৌরসভার বাস ও ট্রাক টার্মিনালেরও। টার্মিনালের গ্লাস ভেঙে পড়েছে এবং পানির ট্যাংকি উড়ে গেছে। শ্রমিকদের থাকার ঘরের টিন উড়ে গেছে।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শার্শা জোনাল অফিসের সহকারী জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার নেয়ামুল হাসান বলেন, 'উপজেলার ১১ ইউনিয়নে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ মে) সকাল থেকে ১১ জন লাইনম্যান ও ৫০ জন ঠিকাদার সংযোগ চালুর চেষ্টা চালাচ্ছেন।'
বেনাপোলের ঘিবা গ্রামের সাহেব আলী বলেন, 'আমার বয়স প্রায় ৮০ বছর। এত বড় ঝড় এর আগে দেখিনি। ১৯৮৮ সালে যশোরে একবার বড় ধরনের সাইক্লোন আঘাত করেছিল। তবে এবার আম্পানের তাণ্ডব স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ঝড়।'