মাকে দেওয়া কথা রেখেছেন, ড্রাগন চাষে সফল রাসেল

ড্রাগন চাষ


চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে দিন দিন ড্রাগন ফলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ ফলের চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে শুধু কালীগঞ্জ উপজেলার দেড়শ’ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ হয়েছে। উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেখ রাসেল আহমেদ বাড়ির আঙিনায় প্রথম এ ফলের চাষ করেন। এখন মাঠেও আবাদ করেছেন। ভালো জাত চিনে চাষ করায় সফলতাও পেয়েছেন তিনি।

ড্রাগন চাষ

রাসেল জানান, তার বাড়ির আঙিনার আশপাশে ১৬ শতক জমিতে মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছিল। ১৫ বছর আগে লাগানো এসব গাছ মাত্র এক লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। গাছগুলো কাটার সময় তার মা তাকে বাধা দেন। ওই সময় তিনি মাকে বলেন, ‘১৫ বছর আগে লাগানো সব গাছ বিক্রি করে দাম পাওয়া গেছে এক লাখ টাকা। আর আপনি আমাকে দোয়া করলে আমি প্রতি বছর আপনাকে ড্রাগন থেকে এক লাখ টাকা লাভ দেবো।’

ড্রাগন চাষ

এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর গাছগুলো কাটা হয়। ২০১৯ সালে বাড়ির আঙিনার ১৬ শতক জমিতে প্রথমে ড্রাগন চাষ শুরু করেন রাসেল। একই সময়ে মাঠে আরও এক বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেন তিনি। আঙিনাসহ মাঠের গাছে প্রচুর ফল ধরেছে। ইতোমধ্যে তিনি ৫০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় এক লাখ টাকার ফল বাজারজাত করার প্রক্রিয়া চলছে। 

ড্রাগন চাষ
রাসেল জানান, ইউটিউব চ্যানেলে চাষের বিভিন্ন ভিডিও দেখে তিনি ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হন। পরে প্রথমে বাড়ির আঙিনার ১৬ শতক জমিতে ও পরে মাঠে এক বিঘা জমিতে আবাদ শুরু করেন। চলতি বছর আরও এক বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে তার এখন ড্রাগনের আবাদ আছে ২ বিঘা ১৬ শতক জমিতে।

ড্রাগন চাষ

তিনি আরও জানান, ড্রাগন চাষ করতে হলে প্রধানত তিনটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সমস্যা, সমাধান ও সম্ভাবনা। এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে নতুন উদ্যোক্তারা কৃষিতে প্রবেশ করলে তারা লাভবান হবেন। 

ড্রাগন চাষ
তিনি জানান, তার এক বিঘা জমিতে ২২০টি পিলার আছে। প্রতিটি পিলারের দাম পড়েছে ২২০ টাকা। পিলারগুলো বাইরে থেকে না কিনে নিজেই তৈরি করেছেন। এতে পিলার মজবুত হয়েছে। প্রতিটি পিলারের গোড়ায় ৪টি করে ড্রাগনের চারা রোপণ করা হয়েছে। এক বিঘায় ৮৮০টি চাষা রোপণ করেছেন। পিলার, টায়ার, চারা, সার, কীটনাশক, সেচ পরিচর্যা বাবদ এক বিঘা জমিতে তার প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কেজিতে ৮-১০টি ফল হলে তার দাম কম। কেজিতে ৩-৪টি হলে দাম ভালো পাওয়া যায়। সুতরাং চারা লাগানোর সময় অবশ্যই কেজিতে সর্বোচ্চ ৪টি ফল হয় সে জাতের ড্রাগনের চারা লাগাতে হবে। এতে ফলের দাম ভালো পাওয়া যায়। 

ড্রাগন চাষ
রাসেল বলেন, লাভ করতে চাইলে ভালো দাম দিয়ে চারা কিনতে হবে। ড্রাগন চাষে প্রথম বছরটায় বেশি খরচ হয়। এরপর থেকে আর তেমন কোনও খরচ নেই। আর একবার গাছ হলে একটানা ২০-২৫ বছর ফল পাওয়া যায়। আগে পাইকারি এক কেজি ড্রাগন ফল ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু করোনার সময় বাজার দর ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ২০০ থেকে আড়াইশ’ টাকা কেজি দরে পাইকারি হারে ফল বিক্রি হচ্ছে। চাষি যদি একশ’ টাকা করে ড্রাগন ফল বিক্রি করেন তাহলেও তার লাভ থাকবে। 

ড্রাগন চাষ
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৬০ জন কৃষক দেড়শ’ বিঘা জমিতে ড্রাগনের আবাদ করছেন। রাসেলের ড্রাগনের বাগান সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। যারা ড্রাগনের চাষ করছেন কৃষি বিভাগ তাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন ও ফল বিক্রির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।